লিওনেল মেসির উত্থান পর্ব থেকে কিংবদন্তি হয়ে ওঠার যাত্রাপথের পুরোটা জুড়েই আছে বার্সেলোনার নাম। স্প্যানিশ এই ক্লাবের কাছে মেসির ঋণও অনেক। হয়তো ফুটবলারই হওয়া হয়ে উঠত না যদি কাতালান জায়ান্ট ক্লাবটা এগিয়ে না আসতো। হরমোনাল কারণে বামন হওয়ার শঙ্কায় থাকা মেসির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল বার্সেলোনা। প্রতিদান দুই হাত ভরে দিয়েছেন মেসিও। আর এই সবকিছু সম্ভব হওয়ার পেছনে অবদান একখণ্ড ন্যাপকিন পেপারের।
আজ থেকে ২৪ বছর আগে একটা ন্যাপকিন পেপারেই স্বাক্ষর হয়েছিল ক্রীড়া ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলোর একটির। ১৩ বছরের লিওনেল মেসিকে এই ন্যাপকিন পেপারে স্বাক্ষর করিয়েই চুক্তিবদ্ধ করেছিল বার্সেলোনা। বাকিটা ইতিহাস। দীর্ঘ ২১ বছর ক্লাবটিতে খেলে তাদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি নিয়ে ২০২১ সালে স্পেন ছাড়েন মেসি। তার এতদিন পর ফের আলোচনায় সেই ন্যাপকিন পেপার।
বার্সেলোনা-লিওনেল মেসির সম্পর্কের দলিল সেই ন্যাপকিন পেপার এবার নিলামে উঠতে চলেছে। আগামী মার্চে ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বোনহামস এটিকে নিলামে তুলছে। নিলামে ন্যাপকিন পেপারটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় পায় ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকায়।
এই নিলাম প্রসঙ্গে বোনহামসের দুষ্প্রাপ্য বই ও পাণ্ডুলিপি বিভাগের প্রধান ইয়ান এহলিং বলেন, ‘আমি নিলাম পরিচালনা করেছি, এমন জিনিসগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। হ্যাঁ, এটি ন্যাপকিন পেপার। কিন্তু এটা সেই ন্যাপকিন পেপার, যেটার মাধ্যমে লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল। এটা বার্সার ভবিষ্যৎ আর মেসির জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছিল। ফুটবলে বিশ্বের কোটি সমর্থককে চমৎকার মুহূর্ত উপহার দিয়েছে।’
মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার ঐতিহাসিক চুক্তি হয় ২০০০ সালে। সে বছর ট্রায়ালে কাতালান ক্লাবটিকে চমকে দেন তিনি। এরপর মেসির পরিবার তাকে নিয়ে ফের আর্জেন্টিনার রোসারিওতে ফিরে যায়। সে সময় একদিন হঠাৎ বার্সেলোনার ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাস মেসির পরিবারকে দুপুরের খাবারের নিমন্ত্রণ জানান। সেখানেই স্বাক্ষর হয় সেই চুক্তি।
এই ন্যাপকিন পেপারেই মেসির সঙ্গে বার্সার চুক্তিস্বাক্ষর হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
ন্যাপকিনে সেদিন রেক্সাস ছাড়াও স্বাক্ষর করেন বার্সার দলবদল বিষয়ক পরামর্শক জোসেফ মিনগেলা ও এজেন্ট হোরাশিও গ্যাগিওলির। এজেন্ট গ্যাগিওলিই প্রথম মেসির নাম সুপারিশ করেছিলেন। সে সময় ক্লাবটির প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন হুয়ান গাসপোর্ত।
সেদিনের সেই চুক্তিপত্রে লেখা ছিল, ‘বার্সেলোনায় ১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে মিনগেলা, হোরাশিও আর বার্সার ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাসের উপস্থিতিতে পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে নির্দিষ্ট অঙ্কে লিওনেল মেসিকে সই করানোর ব্যাপারে একমত হওয়া গেল।’
এরপরেরটা ইতিহাস। ২০০৩ সালে বার্সেলোনা ‘সি’ দল ও ২০০৪ সালে বার্সেলোনা ‘বি’ দলে মেসির অভিষেক হয়। শেষের বছরে প্রথমবারের মতো বার্সেলোনার মূলদলেও খেলার সুযোগ পান মেসি। এরপর ২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার আগে তাদের হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৭২ গোল করেছেন মেসি। জিতেছেন ১০টি লা লিগা, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ।