ইতিহাসের সবচেয়ে অধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে দ্বাদশ সংসদ অধিবেশন বসতে যাচ্ছে বিকেলে। দ্বাদশ সংসদ অধিবেশন নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সময় সংবাদের মুখোমখি হয়ে বলেন, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি সংসদে বিরোধী ভূমিকায় থেকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র এমপিদের।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদের মতোই এবারও বিরোধী দল হিসেবে থাকছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। পাশাপাশি আওয়ামী লীগে থাকলেও বিরোধী ভূমিকায় দেখা যাবে নির্বাচিত ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের। যার মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত।
একদিকে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট দল, আবার স্বতন্ত্ররাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাহলে কতটা প্রাণবন্ত হচ্ছে এবারের সংসদ অধিবেশন। প্রকৃত বিরোধী দল পাবে কী সংসদ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, সংসদ কার্যকর আর প্রাণবন্ত হওয়ার বিষয়টি কোনো দলের ওপর নির্ভর করছে না, ব্যক্তির গঠনমূলক আলোচনার ওপর নির্ভর করছে। এবারের সংসদে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গঠনমূলক ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছেন স্বতন্ত্র এমপিরা।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজয় দাশগুপ্ত বলেন,
স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকেও তারা সংসদে সরকারের কোনো নীতি-কর্মকাণ্ড মানে যেগুলোর সমালোচনা হওয়া উচিত বা আলোচনা হওয়া উচিত, সেসব নিয়ে সংসদে মুখ খুলতে পারবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন,
জাতীয় পার্টির বাইরে যারা আছেন তাদের একটা সুবিধা আছে, তাদের জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য না। তারা যতই হইচই করুক, বিরুদ্ধে ভোট দিক, দলের মনোনয়ন না পেয়ে তারা যেহেতু আসেননি সেক্ষেত্রে সংসদ সদস্য পদ খারিজ হওয়ার কোনো ভয় নেই।
অতীতের দুটি সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও দলটি জনগণের কাছে সত্যিকার বিরোধী দলের ভূমিকায় আসীন হতে পারেনি বলেও মনে করেন তারা।
অধ্যাপক আবদুল মান্নান আরও বলেন,
এতোদিন হয়ে গেল জাতীয় পার্টি গঠন হয়েছে,সেটি ছিল হুসেনই মুহাম্মদ এরশাদ গঠন করেছিলেন। সেই দলটি কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।
অজয় দাশগুপ্ত বলেন,
বেগম রওশন এরশাদ কিন্তু সংসদে নেই। আবার দলের মধ্যে থেকেও একটা ভিন্ন ধারার সূচনা করেছেন। কাজেই জাতীয় পার্টি কিন্তু দলীয় শক্তি অনুসারে আরও দুর্বল হয়েছে।
এদিকে অধিবেশনে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও প্রাণবন্ত আর কার্যকর অধিবেশন নির্ভর করছে মূলত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের (এমপি) ওপর। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া স্বতন্ত্রদের মধ্যে বিজয়ী হন ৬২ জন, যাদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। আর জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। দুটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি।
এরমধ্যে অনিয়ম-সংঘর্ষের ঘটনায় ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এ আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়।
গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পরদিন ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত এমপিরা। আর এমপিদের শপথ গ্রহণের একদিন পর ১১ জানুয়ারি শপথ নেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমোদন দিয়ে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের স্থগিত থাকা একটি কেন্দ্রে গত ১৩ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিলুফার আনজুম পপি বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি।