নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দীঘিরজান থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কে বিদ্যুতের অর্ধশত খুঁটি রেখেই কার্পেটিং করেছে সড়ক বিভাগ। এতে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। চলতি শীত মৌসুমে কুয়াশায় দুর্ঘটনা বেড়েছে কয়েকগুন। এ জন্য সড়ক বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুতকে দায়ী করেছে স্থানীয়রা।
সড়ক বিভাগ বলছে, কাজ শুরু করার আগে খুঁটিগুলো সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ করা হয়েছিলো; কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ এখনো খুঁটিগুলো সরায়নি
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়কটি সড়ক প্রশস্ত করা হয়। ছয় কিলোমিটার সড়কের মাঝখানে রয়েছে অর্ধশত বিদ্যুতের খুঁটি। ব্যস্ততম এ সড়কে দিনে ও রাতে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে যানবাহন, আহত হয়েছেন অনেকে। সোনাইমুড়ী উপজেলার দীঘিরজান বাজার থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত এমন দৃশ্য চোখে পড়বে পথে পথে।
সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, খুঁটি অপসারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা দেয়া হলেও গত তিন মাসেও অপসারণের উদ্যোগ নেয়নি। তবে মান বজায় রেখেই খুঁটি সরানোর পর পুনরায় কার্পেটিং করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সেনবাগ উপজেলার সেনবাগ দক্ষিণ বাজার থেকে সোনাইমুড়ি উপজেলার দীঘিরজান থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ প্রায় শেষের পথে। সওজ বিভাগের অধীনে নির্মিত এ সড়কের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়কের মাঝখানে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণে প্রায় ৭০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে দীঘিরজান থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কে খুঁটি অপসারণ করেনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এজন্য খুঁটি রেখেই বাধ্য হয়ে কার্পেটিং করতে হয়েছে সড়ক বিভাগকে। নির্দিষ্ট সময়ে উন্নয়নকাজ শেষ করার লক্ষ্যে মূলত কার্পেটিং করা হয়।
দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মো. শাহজাহান (৫০)। সোনাইমুড়ীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে নিজের এলাকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ৪ মাস আগে দীঘিরজান বাজার থেকে অটোরিকশা নিয়ে বজরা যাচ্ছিলেন শাহজাহান। পথে খালেক হাজির ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে সড়কের মাঝে থাকা বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তার অটোরিকশাটির। দুর্ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টা অচেতন ছিলেন তিনি। হাত, পা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় দুর্ঘটনার পর থেকে
অটোরিকশা চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ আলী জানান, খুঁটি রেখে সড়ক প্রশস্ত করার কারণে কাজের মানও নষ্ট হয়েছে। যখন খুঁটিগুলো অপসারণের কাজ করবে, তখন খুঁটির স্থানে যে গর্ত হবে সেগুলোতে কার্পেটিং করলে গুণগত মান ভালো থাকবে না। নিয়ম অনুযায়ী সড়ক প্রশস্ত করার আগেই বিদ্যুতের খুঁটিগুলো অপসারণ করা উচিত ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এতে বোঝা যায় পুরো কাজই অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে।
নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার জানান, সেনবাগ থেকে সোনাইমুড়ি বজরা বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয় কিলোমিটার সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণে প্রায় ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে পল্লী বিদ্যুতকে। কিন্তু দীঘিরজান থেকে বজরা বজার পর্যন্ত সড়কে খুঁটিগুলো সরায়নি তারা। ফলে খুঁটি রেখেই বাধ্য হয়ে কার্পেটিং করতে হয়েছে সড়ক বিভাগকে।
নোয়াখালী পল্লী ও বিদ্যুৎ সমিতি জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন জানান, চলতি মাসেই সরানো হবে সড়কের মাঝে থাকা ৩৯টি বিদ্যুতের খুঁটি।