বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই দেশ চীন আর ভারত। প্রতিবেশী এই দুই দেশ আবার রাজনৈতিকভাবে বৈরী। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে যুদ্ধে পর্যন্ত জড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দুই দেশকে একই বিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছে ফুটবল। এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ব্যর্থতায় একই বন্ধনীতে বাঁধা পড়েছে চীন-ভারত।
চীন ও ভারতের মিলিত জনসংখ্যা ২৮০ কোটি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বেশি মানুষের বাস এই দুই দেশে। আর এশিয়া মহাদেশের হিসাব আমলে নিলে ৪০ শতাংশ মানুষই বাস করে চীন ও ভারতে। অথচ মহাদেশীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর থেকে একদম খালি হাতে বিদায় নিয়েছে তারা। এমনকি গোটা টুর্নামেন্টে এই দুই দেশ কোনো গোলই করতে পারেনি। বিশ্বের ২৮০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিরা ছয় ম্যাচ খেলেও পারেনি প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতে।
কাতারে চলমান এএফসি এশিয়ান কাপে এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে। ফুটবলে সাফল্যের সঙ্গে জনসংখ্যার সরাসরি কোনো যোগসূত্র অবশ্য নেই। যে কারণে মাত্র তিন মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ উরুগুয়ে ফুটবলীয় সাফল্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। দুবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তো হয়েছেই, মহাদেশীয় সাফল্যে পেছনে ফেলেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকেও। তবে যে দেশ দুটির জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি করে, তাদের এমন ব্যর্থতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
এবারের টুর্নামেন্টে চীন খেলেছে ‘এ’ গ্রুপে। যে গ্রুপে তাদের সঙ্গে ছিল কাতার, লেবানন ও তাজিকিস্তান। একমাত্র কাতার (৫৮) বাদে বাকি দুই দলের চেয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে আছে চীন (৭৯)। স্বাগতিক হিসেবে ২০০২ সালে বিশ্বকাপ খেলা চীন এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতারের কাছে হেরেছে ১-০ গোলে। বাকি দুই ম্যাচে র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা তাজিকিস্তান (১০৬) ও লেবাননের (১০৭) গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। তিন ম্যাচে ১টি গোল খেলেও পারেনি কোনো গোল করতে।
ভারতের অবস্থাটা অবশ্য ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ভারত। টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া সেরার আসরে খেলছে ভারত। টুর্নামেন্টে আন্ডারডগ হিসেবেই অংশ নিয়েছে তারা। ‘বি’ গ্রুপে ভারতের সঙ্গে ছিল অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তান এবং সিরিয়া। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০২ নম্বরে থাকা ভারতের চেয়ে বাকি তিন প্রতিদ্বন্দ্বীই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। তাই তাদের হারটা অনুমিতই বলা চলে।
ভারতের টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের হার দিয়ে। হট ফেবারিট অস্ট্রেলিয়ার (২৫) বিপক্ষে লড়াই করে প্রশংসাও পেয়েছে তারা। পরের ম্যাচে সিরিয়ার (৯১) বিপক্ষে ১-০ গোলে হারা ম্যাচেও লড়াই করেছে ভারত। কিন্তু শেষ ম্যাচে উজবেকিস্তানের (৬৮) বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩ গোল হজম করে বসে। দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল না খেলেও, পারেনি গোল দিতেও। তিন ম্যাচে ৬ গোল হজম করলেও ভারত গোল করতে পারেনি একটিও। অথচ বর্তমানে খেলছে এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে জাতীয় দলের হয়ে গোল করায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং মেসির পরেই আছেন ভারতের সুনীল ছেত্রি। তারপরও গোলশূন্য থেকেই বিদায় নিতে হলো ভারতকে।
মহাদেশীয় ফুটবলে চীন বা ভারত কারোরই বড় সাফল্য নেই। ২০০২ সালে স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপ খেলাটাই বড় সাফল্য। এখন পর্যন্ত ১৪ বার এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলে চীনের সেরা সাফল্য দুবার রানার্সআপ হওয়া। এছাড়া দুবার করে তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়ার পাশাপাশি দুবার খেলেছে শেষ আটে।
১৯৬৪ এশিয়ান কাপে ইসরাইলের কাছে হেরে রানার্স আপ হওয়াটাই ভারতের সেরা সাফল্য। রপর ১৮৯৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলে ভারত। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১১ সালে তৃতীয়বারের মতো এশিয়ান কাপে সুযোগ পায় এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে। এই টুর্নামেন্টে দল সংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ করার পর ভারত টানা দ্বিতীয়বারের মতো খেলার সুযোগ পেয়েছে।