জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম এ আদেশ দিয়েছেন।
এ আদেশের পর সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফকির মো. জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এদিন আদালতে দুদকের মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য এদিন ঠিক ছিল। কিন্তু মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন পেছাতে সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের নতুন এ তারিখ ঠিক করেন। আজ মির্জা আব্বাসকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
দুদকের মামলার নথি থেকে জানা যায়–
গত ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য গত ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় সবশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় এ মামলার রায়ের তারিখ পেছানো হয়। পরবর্তীতে এ মামলা রায় থেকে উত্তোলন করে ফের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য রাখেন। বিচারক আদেশে বলেছেন, মামলাটিতে ঘটনাগত এবং তথ্যগত বিষয়সহ জটিল আইনগত বিষয় জড়িত রয়েছে। এ বিষয়ে উভয়পক্ষের অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানি হওয়া আবশ্যক মর্মে আদালত মনে করেন। এজন্য মামলাটি রায় প্রচারের তালিকা থেকে উত্তোলনপূর্বক অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৪ জানুয়ারি অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ওইদিন এ মামলার সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে মির্জা আব্বাস ও সাফাই সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময়ের আবেদন জানান। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। পরে ২ নভেম্বর অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় তাকে আবার শাহজাহানপুর থানায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখাতে আবেদন করা হয়।
শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম আখন্দ এ আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মির্জা আব্বাসের উপস্থিতিতে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ও তার গ্রেফতার দেখাতে করা আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ওইদিন মির্জা আব্বাসকে এ মামলায় গ্রেফরতার দেখানো হয়। এরপর থেকে কারাগারে আটক রয়েছেন তিনি।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম রাজধানীর রমনা থানায় মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে আসামি করে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৮ সালের ১৬ জুন বিশেষ জজ আদালত-৬ (জেলা ও দায়রা জজ) এর তৎকালীন বিচারক তানজীনা ইসমাইল মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে এ মামলা বাতিল করেন। এ মামলায় বিচার চলাকালীন আদালত বিভিন্ন সময়ে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এছাড়া মির্জা আব্বাসসহ পাঁচ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর মামলার সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে মির্জা আব্বাস নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন।