Homeআন্তর্জাতিকমার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কি জিততে পারবেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কি জিততে পারবেন ট্রাম্প?

হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পালনকালে অন্তত দুবার অভিশংসনের মুখোমুখি হন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। একাধিক ফৌজদারি মামলার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। সমালোচকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, স্বৈরশাসক হিসেবে দেশ শাসনের চক্রান্ত করেছিলেন তিনি। এতসব নেতিবাচক ঘটনার পরও চলতি বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সম্প্রতি পরিচালিত একাধিক জরিপে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান শিবির        থেকে মনোনয়নের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। এতে প্রায় ৪০ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। তিন বছর আগে মার্কিন রাজনীতিতে অপদস্থ এবং পরাজিত হওয়ার পর এই জরিপগুলোতে ট্রম্পের ফিরে আসার আভাস মিলছে।

নিজের বিরুদ্ধে হওয়া ফৌজদারি মামলাগুলোকে প্রতারণা এবং মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গত ১৫ জানুয়ারি মধ্য-পশ্চিম আমেরিকার আইওয়া প্রদেশে ‘রিপাবলিকান ককাস’ এ প্রাথমিক নির্বাচনে তিন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে ভোটে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সবশেষ ট্রাম্পের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চারটি কারণে ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে জিততে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নাখোশ ভোটার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন হোয়াইট হাউস যুক্তি দিয়ে বলেছে, মার্কিন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ক্ষমতা ছাড়েন তখন যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে বর্তমানে এই হার সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া ২০২২ সালের জুনে দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে পৌঁছালেও গত অক্টোবর পর্যন্ত তা ৩ দশমিক ২ ছিল।

অর্থনৈতিক এই উন্নতি সত্ত্বেও দেশটির অনেক বর্ণের ও তরুণ ভোটারসহ জনগণের বড় একটি অংশ বাইডেনের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা মুদি, গাড়ি, বাড়ি, শিশু এবং বয়স্কদের যত্নের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য এবং পরিষেবার খরচের সঙ্গে আয়ের তাল মিলিয়ে না চলতে পারার দুর্দশার কথা বলছেন।

বাইডেন যখন দেশটির অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন, তখন মার্কিনিরা অর্থনৈতিক সূচক নয়, বরং তাদের সামর্থ্যের কথা ভাবেন। মতামত জরিপগুলোতে দেখা যায়, ভোটাররা বরং রিপাবলিকান শাসনামলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বেশি ভালো হিসেবে দেখেন। যদিও ট্রাম্প আগামী নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে শুধু অস্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন।

ভয়

অর্থনীতির বাইরেও আরও অনেক কারণে মার্কিন ভোটাররা বিচলিত। ট্রাম্প উদ্বেগের সাথে কথা বলেন। সেই কথা বাস্তব হোক বা না হোক, এটা সত্য যে অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এমন একটি দেশে রয়েছেন; যা ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময় এবং আরও সাংস্কৃতিকভাবেঝ প্রগতিশীল হয়ে উঠছে।

তাদের ভিত হারিয়ে ফেলার একটি বিস্তৃত বোধও রয়েছে। আমেরিকান জীবনের মূল ভিত্তি-বাড়ির মালিকানা, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্মানজনক মজুরি এবং কলেজ শিক্ষা বর্তমানে অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জরিপগুলোতে দেখা যায়, ভোটাররা দেশটিতে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে তারা মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল নিয়েও বিচলিত।

ট্রাম্প এসব ভয়কে নিজের পক্ষে পরিচালনায় বেশ পারদর্শী। যদিও তিনি এখনও নিজেকে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থেকে আসা একজন হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি একাধারে অগ্নিসংযোগকারী এবং অগ্নিনির্বাপক। তিনি ঘোষণা করেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় নিজেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে নিজেকে ত্রাণকর্তা হিসেবে জাহির করছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের পদক্ষেপ উপেক্ষা করার মতো নয়

যদিও নিজ দলের মধ্যে অনেক সমালোচক, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং কিছু কিছু গণমাধ্যমও ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের জন্য অযোগ্য হিসাবে দেখে। কিন্তু দেশটির লাখ লাখ ভোটার এই বিষয়ে একমত নন।

ট্রাম্পের অনেক সমর্থক মনে করেন, রাজনৈতিক ময়দানে অনিষ্টকারীদের চক্রান্তের শিকার তিনি। চলতি বছরের শুরুতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও ইপসোসের এক জরিপে অংশ নেয়া রিপাবলিকানদের অর্ধেকই বলেছেন, ট্রাম্পকে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হলেও তাকে ভোট দিতে তাদের কোন সমস্যা হবে না।

সব দোষ বাইডেনের, কোনো কৃতিত্ব নেই

ট্রাম্প এমন এক হোয়াইট হাউসের কথা বলে জনসাধারণের কাছে সুবিধা নিতে পারেন, যা এখন পর্যন্ত জনসাধারণকে অনেক কিছু বোঝাতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে বাইডেনের তৈরি চাকরি সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা, অবকাঠামো, ক্লিন এনার্জি এবং চিপ উৎপাদনে সরকারি বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও মানুষের অপরিবর্তিত জীবন।

বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর দুটি বিদেশি যুদ্ধে জড়িয়েছেন; যা আমেরিকানদের বিভক্ত করেছে। ট্রাম্প নিজেকে সবসময় ‘হস্তক্ষেপবিরোধী’, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী হিসেবে দাবি করেন। তার এই বার্তা ইউক্রেন বা ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত ভোটারদের রিপাবলিকান শিবিরে টানতে পারে।

অন্যদিকে বাইডেন ঐতিহ্যগতভাবে হস্তক্ষেপবাদী আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির ধারা বজায় রেখে চলেছেন।

যে চারটি কারণের কথা তুলে ধরা হয়েছে, তার অর্থ এই নয় যে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় একেবারে নিশ্চিত। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক ১০ মাস আগে এই মুহূর্তে ট্রাম্পের যে জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার তার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর