দেশের নেটওয়ার্কে অন্য কোনো অনিবন্ধিত, অবৈধ, চোরাই পথে আসা মোবাইল ফোন কেউ যাতে ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ব্যবস্থা নেবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনিবন্ধিত, অবৈধ বা চোরাই পথে আসা কোনো মোবাইল ফোন কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য অল্প সময়ের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আইএমইআই) জোরদার করা হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিটিআরসিকে শুধু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলে হবে না বলে মনে করেন জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, স্মার্ট বিটিআরসি করার জন্য শুধু রেগুলেটর হিসেবে নয়, একটা স্মার্ট ফ্যাসিলেটর হওয়ার যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে হবে।
দেশের স্থানীয় শিল্পে বিটিআরসির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে জানিয়ে পলক বলেন,
আজ বাংলাদেশে ১৭টি মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট হয়েছে। এখানে আমাদের ৫০ হাজারের মতো ছেলে-মেয়ে কাজ করছে। এখাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা এ খাত থেকে রফতানি আয় যাতে বাড়াতে পারি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করত পারি, সেজন্য ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আইএমইআই) অল্প সময়ের মধ্যে জোরদার করতে হবে।
নিবন্ধিত বৈধ মোবাইল ফোন ছাড়া বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে অন্য কোনো অনিবন্ধিত, অবৈধ, চোরাই পথে আসা মোবাইল ফোন কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারেন তার জন্য বিটিআরসি ব্যবস্থা নেবে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর ফলে স্থানীয় উৎপাদন ও রফতানি বাড়বে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে এই সিস্টেমটা অনেক বেশি কার্যকর হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যাদের কাছে আমাদের রাজস্ব পাওনা রয়েছে, আমাদের সেগুলো আদায় করতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান আন্তর্জাতিক সংকটে রাজস্ব আয়ের দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে। তবে অবশ্যই যারা বেশি রাজস্ব দিয়ে থাকেন তাদের কাছে থেকে আরও বেশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ না করে, আমাদের রাজস্ব আহরণের যে সম্ভাবনা আছে সেগুলো বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের যেসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে- ফাইভজি, রোবোটিক্স, আইওটি- সেগুলোকে আমরা ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমরা আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে হবে। বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি যে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা লক্ষ্য করছি যে জার্মানি-জাপান যেভাবে রোবোটিক্স আইওটি ব্যবহার করা শুরু করেছে। তাতে যদি আমরা টেকনোলজি সম্পর্কে নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে না পারি, তাহলে আমরা মারাত্মক একটি অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি।
তরুণ প্রজন্ম ও উদ্ভাবকরা যেন আরও উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল কৌশল নিয়ে কাজ করতে পারেন আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি আমাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। ২০০৮ সালে ইন্টারনেটের গ্রাহক ৩৬ লাখ থাকলেও বর্তমানে ১৩ কোটি। ২০০৮ সালে টেলি ঘনত্ব ছিল ৩৪ শতাংশ আর বর্তমানে তা ১০৫ শতাংশ। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ আর বর্তমানে তা ৭৪ শতাংশ। ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ছিল ৭ দশমিক ৫ জিবিপিএস আর বর্তমানে তা ৪ হাজার ৭৬৫ জিবিপিএস। ওই সময়ে প্রতি জিবি ইন্টারনেটের দাম ২৭ হাজার টাকা ছিল আর বর্তমানে তা ৪০ টাকায় নামিয়ে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবাকে তিনি সারা বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। এগুলো সম্ভব হয়েছে নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে।
এ সময় বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।