Homeআন্তর্জাতিকযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র: দ্য ইকোনমিস্ট

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র: দ্য ইকোনমিস্ট

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকে পাল্টাপাল্টি হামলা ও গুপ্তহত্যার ঘটনা উভয়কে সামনাসামনি দাঁড় করিয়েছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।

রোববার (২১ জানুয়ারি) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া গাজা সংঘতের ১০০ পেরিয়েছে। সংঘাতের শুরু থেকেই ইসরাইলকে জয়ী করতে প্রাণপণ সাহায্য করছন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইভাবে এই সংঘাতের মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেও চেষ্টা করছেন তিনি।

প্রতিবেদন মতে, তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার জন্য দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইরানের ‘প্রতিরোধ গোষ্ঠী’ এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের ওপর আরও বিপজ্জনক হামলা পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার ঘটনাও চলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ১৪০টির বেশি ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় হামলাটি চালানো হয় গত শনিবার (২০ জানুয়ারি)। আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ডের মতে, পশ্চিম ইরাকের আইন আল আসাদ মার্কিন ঘাঁটিতে ‘বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট’ ছোড়া হয়।

তবে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে সেগুলোর অধিকাংশ ধ্বংস করা হয়। তারপরও কয়েকটি রকেট ঘাঁটিতে আঘাত হানে। এতে বেশ কয়েকজন মার্কিন ও ইরাকি সেনা আহত হন। এর পরপরই আমেরিকাও ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, এ হামলার পর সরসারি ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নিতে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছেনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর ফলে একটা উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল মনে হবে। যদি পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচনের বছরে নতুন এক যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়বেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিকে ইয়েমেনে ইরানের আরেক মিত্র হুতি বিদ্রোহীদের বাবেল মানদেব প্রণালীতে বিদেশি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে তাদের ওপর এখন পর্যন্ত সাত দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি বলছে, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লড়াই করছে। তার অংশ হিসেবে লোহিত সাগর ও বাবেল মানদেব প্রণালীতে ইসরাইলি ও পশ্চিমা জাহাজের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কিন্তু তাদের টার্গেট করার ব্যাপারটি বিক্ষিপ্ত। যদি ইসরাইলি ও পশ্চিমা জাহাজ শনাক্তকরার রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সহযোগিতা নিচ্ছে। মার্কিন বিমান হামলায় হুতিদের হামলা বন্ধ হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বলেছেন, আমেরিকার হামলা হুতিদের থামাতে পারবে না।

প্রতিবেদন মতে, ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন ইয়েমেনে ‘কার্যকর সামরিক অভিযান’ চালানোর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করছে। এদিকে লেবাননে ইরানের সবচেয়ে পুরানো ও সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরাইলি বাহিনীর সাথে নিয়মিত গুলি ও রকেট বিনিময় করছে। তারাও হামাসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। কিন্তু এখনও ইসরাইলের সাথে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করেনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইল আগ বাড়িয়ে লেবাননে হামলা চালানোর হুমকি দিলেও, বাইডেন প্রশাসন সে ব্যাপারে ইসরেইলকে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় হামলা বন্ধ না হলে হিজবুল্লাহর ওপর প্রতিশোধের পাশাপাশি বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান এভাবে বিপজ্জনক ও ভারসাম্যমূলক খেলা অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইলকে দুর্বল করার লক্ষ্যে হামলা চালাতে ‘প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো’কে সাহায্য করে চলেছে ইরান। এর মাধ্যমে একইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাড়াতে ও আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে তাদেরকে বেইজ্জত করতে চাইছে তেহরান। বিপরীতে সীমিত পরিসরে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।  উভয়ই সরাসরি সংঘাত থেকে বিরত থেকেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব নাও হতে পারে।

Exit mobile version