অল্টারনেটিভ এয়ার ফিল্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। যাত্রীচাপ সামাল দিতে দুটি বোর্ডিং ব্রিজ তৈরির পাশাপাশি বাড়তি ১০টি বিমানকে পার্কিং সুবিধা দিতে নতুন এয়ার এপ্রোনও প্রস্তুত করা হয়েছে।
গত ২৩ বছরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম রাত ১১টার পর বন্ধ হয়ে যেত। পরদিন সকাল ৭টায় পুনরায় কার্যক্রম চালু হতো। ফলে দিনের মাত্র ১৬ ঘণ্টা সেবা পেতেন এই বিমানবন্দরের যাত্রীরা। অথচ ২০০০ সালে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছিল চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন,
সবকিছু মিলিয়ে আমাদের চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেভাবে দিনে ১৬ ঘণ্টা করে চলছে, তা কিন্তু আমাদের জাতির অগ্রযাত্রার সঙ্গে মিলছে না। কাজেই আমাদের বিমানবন্দরকে যদি দিনে ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করা যায়, তাহলে আমরা আমাদের সক্ষমতা পুরোদমে ব্যবহার করতে পারব।
মধ্যরাতের গুরুত্বপূর্ণ ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিমান সংস্থা হয়ে ইউরোপ-আমেরিকাগামী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হতো। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকাগামী কানেক্টিং ফ্লাইটগুলো সকালেই ছাড়ে। আবার এসব ফ্লাইটের চট্টগ্রামের ট্রানজিট যাত্রীরা মধ্যরাতের পরিবর্তে সকালেই বিমানের টিকিট করতে বাধ্য। ফলে চট্টগ্রামের যাত্রীদের মধ্যপ্রাচ্যের বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো।
চট্টগ্রামের পপুলার ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরের মালিক সৈয়দ মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, যদি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর রাতের ফ্লাইট পরিচালনা করে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ফ্লাইটগুলোর শিডিউল সমন্বয় করা যেত। ফলে সহজেই কানেক্টিং ফ্লাইটগুলো পাওয়া যাবে।
বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার বিষয়ে চট্টগ্রামের এভিয়েশন ক্লাবের সভাপতি মো. আসিফ চৌধুরী বলেন, রাতে বিমানবন্দর পরিচালনা হলে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাগামী ফ্লাইটগুলোতে সহজে সংযোগ করা যায়। এতে যাত্রী পরিবহনও বাড়বে। এতে যাত্রীরা যেসব উপকৃত হবেন পাশাপাশি সেই সুবিধা বিমানবন্দরও পাবে।
এমনকি রাতে কুয়াশা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান অবতরণে কোনো জটিলতা হলে বিমানগুলোকে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের কলকাতা কিংবা থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বিমানবন্দরে আশ্রয় নিতে হয়। অথচ মধ্যরাতে রানওয়ে সচল রেখে এই বিমান অবতরণের সুযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের।
কিন্তু নানা জটিলতায় এতদিন চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর অল্টারনেটিভ এয়ার ফিল্ড হয়ে উঠতে পারেনি। অবশেষে সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দিন এবং রাতের ২৪ ঘণ্টা বিমানবন্দর সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বলেন,
আগে ঢাকায় কোনোর বিমান না নামতে পারলে সেটি কলকাতা বা ব্যাংককে গিয়ে অবতরণ করত। এখন যেহেতু চট্টগ্রামেই এয়ারফিল্ড থাকছে। তাই সেগুলো এখন চট্টগ্রামেই অবতরণ করবে।
এদিকে ২৪ ঘণ্টা বিমানবন্দর সচল রাখার অংশ হিসেবে বিদ্যমান দুটি বোর্ডিং ব্রিজের পাশাপাশি যাত্রী চাপ সামাল দিতে তৈরি করা হচ্ছে আরও দুটি নতুন বোর্ডিং ব্রিজ। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে এয়ার এপ্রোনের সীমানা।
তা ছাড়া শাহ আমানত বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলেও এখানে মাত্র ৭টি বিমান পার্কিং রাখা যেত। কিন্তু নতুন করে অ্যাপ্রোন এরিয়া তৈরি করার কারণে আরও অন্তত ১৩টি বিমান এখানে অনায়াসে রাখা যাবে। ফলে বিমান ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২০টিরও বেশি।
২০২৩ সালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর হয়ে ১৬ লাখের বেশি যাত্রী অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াত করেছে। এখানে দৈনিক ১৮টি অভ্যন্তরীণ এবং ৪০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে।