‘দ্য ভাইবস আর অফ’, ইংরেজি ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি ভাগধারা। বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় মনমরা, বিষণ্ণ বা ভাবলেশহীন। শব্দগুচ্ছটি মানুষের পকেটের সঙ্গে তথা অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, সম্প্রতিক বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিতর্ক বা বিশ্লেষণে এর ব্যবহার তেমন দেখা যায়নি।
কিন্তু গত বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বাগধারাটি বারবার ফিরে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি যেসব তথ্য-উপাত্ত সামনে এসেছে, তা দেখে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে মার্কিনিদের সন্তুষ্টই হওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য-উপাত্ত মতে, মুদ্রাস্ফীতি অনেকটা কমেছে, পেট্রোলের দাম কম, কর্মসংস্থান প্রচুর, আয় বাড়ছে এবং শেয়ারবাজারও শক্তিশালী।
কিন্তু বেসরকারি জরিপ বলছে অন্য কথা। একটার পর একটা জরিপে উঠে আসছে, মার্কিনিরা সুখে নেই; বরং বেশ অসুখীই। কারণ তাদের পকেটে যথেষ্ট টাকা নেই। তারা এটাও মনে করছে যে, অর্থনীতির অবস্থা এখন খুবই বাজে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যাচ্ছেতাইভাবে দেশ চালাচ্ছেন।
মার্কিনিরা আসলেই কেমন আছে বা দেশের অর্থনীতি নিয়ে মার্কিনিদের মনোভাব কী তা নিয়ে নিয়মিত ‘কনজ্যুমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স’ নামে একটি সূচক প্রকাশ করে থাকে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিস।
বিগত দুই বছর ধরে এই সূচককে এমন স্তরে ওঠানামা করতে দেখা গেছে – যেমনটা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার সময়। এমনকি গত ডিসেম্বরে এর কিছুটা উন্নতি হলেও ২০২০ সালের প্রথম দিকে করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির প্রাক্কালে যা ছিল তার চেয়েও ৩০ শতাংশ নিচে।
অন্যান্য জরিপেও প্রায় একই ধরনের হতাশামূলক চিত্রই উঠে এসেছে। ২০০৯ সাল থেকে ফি সপ্তাহে দ্য ইকোনমিস্ট/ইউগভ পোল একটি জরিপ চালিয়ে আসছে। জরিপে মূলত দেড় হাজার মার্কিনিকে দেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন করতে বলা হয়।
তাদের সর্বশেষ জরিপেও প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা বলেছেন, অর্থনীতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। করোনা মহামারিকালে বিশ্বজুড়েই অর্থনীতির অবস্থা নাজুক ছিল। দ্য ইকোনমিস্ট/ইউগভ পোলের জরিপ মতে, কোভিডের আগে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা অর্থনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।
সরকার পরিচালনায় বাইডেনের সক্ষমতা নিয়েও মার্কিনিদের মনোভাব তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। গত নভেম্বরে গ্যালাপ পোলের চালানো এক জরিপে উত্তরদাতাদের দুই-তৃতীয়াংশই (প্রায় ৬৭ শতাংশ) ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের অর্থনীতি পরিচালনার ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
যদিও মার্কিন অর্থনীতির আকার গত কয়েক বছর ধরে ক্রমেই বেড়েছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, সাধারণ মার্কিনিদের মনে সুখ নেই। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হলেও ইদানিং মনমরা ভাব তাদের। প্রতিনিয়ত হতাশার সাগরে ডুবে যাচ্ছেন তারা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণ মার্কিনিদের মনমরা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের মজুরি হ্রাস পেয়েছে। ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু বেসরকারি খাতের কর্মীদের গড় আয় করোনা মহামারির আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেমন ছিল, সেই স্তরেই আটকে আছে।