নিত্যপণ্যের বাজারে দামের চাপে যখন ওষ্ঠাগত ভোক্তার প্রাণ, তখন নানা অভিযান-তদারকিতেও মিলছে না কোনো সমাধান। কারণ বাজার ব্যবস্থাপনাতে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। তাই বাজারে স্বস্তি ফেরাতে নিত্যপণ্যের বাজার বিষয়ক একটি আলাদা মন্ত্রণালয়ের দাবি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির।
দরদামে লঙ্কাকাণ্ড ঘটানো নিত্যপণ্যের বাজারকে মগের মুল্লুক বললেও যেন আক্ষেপ ঘোচে না ভোক্তার। নিত্যপণ্যের চড়াদামে নাভিশ্বাস উঠা এক ক্রেতা বলেন, নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি এখন নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে গেছে। পণ্যের সরবরাহ কম হলেও মজুতকারীরা দাম বাড়িয়ে দেন।
সবাই বাজারে স্বস্তি চায়। সবার চোখেই রয়েছে বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতার অভাব। আরেকজন ক্রেতা বলেন, সব মানুষ কি এত দাম দিয়ে পণ্য কিনতে পারবেন? বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অবশ্যই সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এই সমন্বয়হীনতাই আমাদের একটি বড় সমস্যা।
এমনকি বাজারে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব দেখছে খোদ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিও। সেক্ষেত্রে যুক্তিও রয়েছে দৃশ্যমান। যেমন, শাক-সবজি, মসলা জাতীয় পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত কৃষি মন্ত্রণালয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জড়িত দুধ, ডিম এবং মাছ-মাংসের উৎপাদনে; চাল-গমের মতো দানাদার খাদ্যের উৎপাদন কৃষিতে হলেও তা দেখভাল করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এসব উৎপাদনে দরকারি সারের বন্দোবস্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সেচের বড় এক অংশ চালায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। পরিবহন করে নৌ ও সড়ক মন্ত্রণালয় আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয় নিরাপত্তা। কোনো কারণে সংকট হলে তা আমদানিতে দারস্থ হতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এলসি (ঋণপত্র) খোলা যাবে কি-না, তা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুল্ক সুবিধার বিষয়গুলো নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এরই মধ্যে দামের চাপে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠলে বাজারে নেমে পড়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা। যদিও দিনশেষে ভোক্তারা পান না কাঙ্ক্ষিত সেই স্বস্তির দেখা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। ছবি: সময় সংবাদ
এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের জন্য একটি বিশেষ মন্ত্রণালয়ের দাবি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির। সংগঠনটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন,
যত দিন পর্যন্ত না খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআর মিলিয়ে একটি মন্ত্রণালয় না করা হয়, আমরা যদি বিচক্ষণতার সঙ্গে এটি পরিচালনা করতে না পারি, ততদিন পর্যন্ত আসলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি খুব বেশি আসবে বলে আমার মনে হয় না।
এক্ষেত্রে একমত অর্থনীতিবিদরাও। তারা বলছেন, চাহিদা-যোগানের সঠিক হিসাব রেখে কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভোক্তারা সুফল পাবেন।
এ বিষয়ে সিরডাপের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সমন্বয়হীনতা কিন্তু অনেক সময় ঝামেলা করে। এখন একেকটি সংস্থা একেকটি বিষয়ে কাজ করছে। এতে অনেক সময় দেখা যায় যে তারা হয় তো জানেনও না কে কোনটা করার কথা বা কে কোনটা করছে বা কোন স্তরে করছে। আমার মনে হয়, কোনো সংস্থা যদি হয়, তারা যদি আগে থেকে তথ্য-উপাত্ত ঠিকমতো রাখে, তাহলে বাজারের কখনও অপ্রত্যাশিত গ্যাপ তৈরি হবে না।’
তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, দোকান মালিকদের এ দাবির পক্ষে যুক্তি বিশ্লেষণ করবে কে বা এ দাবি বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নেবে কে।