মাত্র তিনদিনের ব্যবধান। এর মাঝেই বিদায় নিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী দুই কিংদবন্তি। ব্রাজিলের ফুটবলের ‘বুড়ো নেকড়ে’ মারিও জাগালোর পর বিদায় নিলেন জার্মান ফুটবলের ‘কাইজার’ ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। তারা দুজনই ছিলেন নিজ নিজ দেশের ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্যতম।
গত ৫ জানুয়ারি ৯২ বছর বয়সে অন্যলোকে পাড়ি জমান মারিও জাগালো। ব্রাজিলের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জেতা এই ইনসাইড ফরোয়ার্ডের বড় পরিচয় অবশ্য কোচ হিসেবেই। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ মানা হয় তাকে। তাকে ব্রাজিল ফুটবলের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ও বলা চলে। যখনই ব্রাজিলের ফুটবল পথ হারিয়েছে, এগিয়ে এসেছেন জাগালো। কখনো কোচ হিসেবে তো কখনো কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকায়। বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ানের চোখেই তো তাই পেলের পাশাপাশি ব্রাজিলের ফুটবলের সবচেয়ে প্রভাবশালী চরিত্র তিনিই।
ব্রাজিলের জন্য জাগালো যা, বেকেনবাওয়ার জার্মানির জন্য তার চেয়েও বেশি। ফুটবলার হিসেবে এই জার্মান জাগালোর চেয়েও অনেক বড়। ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেই থাকবে বেকেনবাওয়ারের নাম। তাকেই ফুটবল ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডার মানা হয়ে থাকে। জার্মান ফুটবলের প্রথম সুপারস্টার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তাকেই।
তবে ফুটবলার পরিচয়েই বেকেনবাওয়ারকে আটকে ফেলা যাবে না। তার দারুণ ক্ষুরধার মস্তিষ্ক দিয়ে রীতিমতো ফুটবলকেই বদলে দিয়েছেন তিনি। ‘লিবেরো’ বা ‘সুইপার’ রোলে খেলার মাধ্যমে প্রথাগত রক্ষণকৌশলকে বদলে আরও আধুনিক করেছেন ফুটবলকে। ফুটবলের পাওয়ারহাউস হিসেবে জার্মানির উত্থানে বড় ভূমিকা বেকেনবাওয়ারের। কোচ হিসেবেও ছিলেন সেরাদের কাতারে। জার্মান ফুটবলে তার বহুমুখী অবদান ও প্রভাবের কারণেই তো ‘কাইজার’ বা সম্রাট উপাধিটা এমন চমৎকারভাবে মানিয়ে গেছে তার সঙ্গে।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন বেকেনবাওয়ার। ছবি: সংগৃহীত
এক জায়গায় জাগালো আর বেকেনবাওয়ারের মধ্যে আশ্চর্য মিল আছে। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার দুর্লভ রেকর্ড আছে দুজনেরই। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা জাগালো ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে কোচ হিসেবেও ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতান। পেলের মতো ব্রাজিলের প্রথম তিন বিশ্বকাপ শিরোপায় অবদান জাগালোরও। আর তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতেছেন। একটা সময় পর্যন্ত যে রেকর্ডটাকে অলঙ্ঘনীয়ই মনে করা হতো।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী প্রথম খেলোয়াড় মারিও জাগালো। ছবি:সংগৃহীত
জাগালোর সঙ্গে বেকেনবাওয়ারের মিলটা এ জায়গাতেই। খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায় বিশ্বকাপ জেতা দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জেতেন এই জার্মান। এরপর ১৯৯০ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন ভেঙে খানখান করে কোচ হিসেবেও জার্মানিকে শিরোপা জেতান বেকেনবাওয়ার। ভাগ বসান জাগালোর রেকর্ডে। একদিক দিয়ে তো এই ব্রাজিলিয়ানকেও ছাড়িয়ে যান বেকেনবাওয়ার। খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকার পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে জার্মানির আর্মব্যান্ড তো কাইজারের হাতেই ছিল।
দুই কিংবদন্তির মিল তাদের বিদায়েও। মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে চলে গেলেন দুজনই। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে রেখে গেলেন মোট পাঁচটি বিশ্বকাপ। দল হিসেবে শুধু ব্রাজিলেরই আছে এতোগুলো বিশ্বকাপ!