Homeরাজনীতিছাড় পাওয়ার পরও কমলো জাতীয় পার্টির আসন, ২৩ থেকে ১১

ছাড় পাওয়ার পরও কমলো জাতীয় পার্টির আসন, ২৩ থেকে ১১

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ফলে জাপাকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরিয়ে নেয়া হয়। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ১৫ স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা। আর এতে চলমান একাদশ সংসদ থেকে অর্ধেকের কম প্রার্থী নিয়ে দ্বাদশ সংসদে যেতে হচ্ছে দলটিকে।

নানা নাটকীয়তা, গুঞ্জন ও দেনদরবারের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পায় জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ নির্বাচনে ২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী ছিল। শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া ২৬টি আসনে মাত্র ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি।

ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য অর্ধেকের বেশি কমলো আসন। বর্তমানে দলটির ২৩ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন।

বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী,

জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জয়ী হয়েছেন। তারা রংপুর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালী থেকে নির্বাচন করেন। এ চার জ্যেষ্ঠ নেতার বাইরে প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), গোলাম কিবরিয়া (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১) ও শরিফুল ইসলাম (বগুড়া-২) নির্বাচিত হন।

রুহুল আমিন হাওলাদার ও আশরাফুজ্জামান ছাড়া বাকিরা বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যও।
একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩ জন সদস্যের মধ্যে ঢাকায় সৈয়দ আবু হোসেন, গাইবান্ধায় শামীম হায়দার পাটোয়ারি, ময়মনসিংহে ফখরুল ইমাম, সুনামগঞ্জে পীর ফজলুর রহমান, কুড়িগ্রামে পনির উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারীতে আহসান আদেলুর রহমান ও রানা মোহাম্মদ সোহেল, বগুড়ায় শরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জে লিয়াকত হোসেন, বরিশালে নাসরিন জাহান, বগুড়ায় নুরুল ইসলাম তালুকদারসহ ১৪ জন সংসদ সদস্য হতে পারেননি।

বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় আসন না পেয়ে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এর বাইরে রংপুরে মসিউর রহমান রাঙ্গা ও পিরোজপুরে রুস্তম আলী ফরাজি দল থেকে বাদ পড়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। তারাও জিততে পারেননি।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় এবার ঢাকায় একটি মাত্র আসন (ঢাকা-১৮) পায় জাপা। সেটি দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তিনি হেরে গেছেন।

রাজধানীর উত্তরা, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার এ আসনে শেরীফা কাদের জামানত হারিয়েছেন। তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর কাছে। নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান খসরু চৌধুরী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক।

২০১৪ ও ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে জাপা নির্বাচন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপাকে ৩৩টি আসন দেয়া হয়েছিল। তারা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে জাপা ২৩টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দল হয়। এবার দলটি গতবারের অর্ধেকের কম আসন পেল, ফলে দেখার পালা কোথায় যাবে জাপা?

এবার জাপা সর্বোচ্চ ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে ১১ জন প্রার্থী নিজে থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৬৫ জন প্রার্থী টিকে থাকেন। তবে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ১৯ জন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন ২৪৬ জন।

এবার একনজরে দেখে নেয়া যাক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ভোটগ্রহণ: সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা।

আসন: ভোট হয় ২৯৯ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে পরে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটার: মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।

কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।

ভোটের পদ্ধতি: সব আসনেই ব্যালট পেপার ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ হয়।

সর্বশেষ খবর