Homeজেলানড়াইলে স্বতন্ত্র প্রাথী না থাকায় ভোটার আনাই মূল চ্যালেঞ্জ নৌকার প্রার্থীদের

নড়াইলে স্বতন্ত্র প্রাথী না থাকায় ভোটার আনাই মূল চ্যালেঞ্জ নৌকার প্রার্থীদের

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল ।।

নড়াইলে স্বতন্ত্র প্রাথী না থাকায় ভোটার আনাই মূল চ্যালেঞ্জ নৌকার প্রার্থীদের। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে নৌকায় মনোনয়ন দেওয়ার পর রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে আসে জেলাটি।

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, নড়াইল-২ আসনে এবারও ক্ষমতাসীন দলের আস্থা মাশরাফীর প্রতি। অন্যদিকে, নড়াইল-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য মো. কবিরুল হক মুক্তি। নড়াইল জেলার দুই আসনের ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থীরা এককভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন। নড়াইল জেলার ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থীই এগিয়ে আছেন। স্বতন্ত্র প্রাথী না থাকায় ভোট কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার আনাই তাদের মূল চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনি প্রচারের শেষে নড়াইলে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

নড়াইল-২ আসনের নির্বাচনে এবার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু। তবে শেষ পর্যন্ত মাশরাফীকে সমর্থন জানিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে মাঠে মাশরাফীর আর কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী খন্দকার ফায়েকুজ্জামানের ভোটের মাঠে সরব উপস্থিতি রয়েছে। তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, খন্দকার ফায়েকুজ্জামান কিছু ভোট পেলেও বড় ব্যবধানে জিতবেন মাশরাফী। প্রচারেও দেখা গেছে মাশরাফীর আধিপত্য।

প্রতিদ্বন্দ্বীতার তীব্রতা হ্রাস পাওয়ায় মাশরাফীর জয় অনেকটা নিশ্চিত হলেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার জন্য ভোট চাওয়ার পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন তারা।
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, আমরা সবাই নৌকার প্রার্থী মাশরাফীর হয়ে কাজ করছি। সবাইকে নৌকায় ভোট দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য উৎসাহিত করতে কী করছেন জানতে চাইলে তার জবাব, সংসদ সদস্য হিসেবে মাশরাফী সফল। কোভিডের সময় সাধারণ মানুষের জন্য তিনি অনেক করেছেন। এছাড়া হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত করছেন। ১৩টি আইসিইউ বেড তৈরি হবে। নার্সিং কলেজ, আইসিটি পার্ক নির্মাণ, নদী খনন ও রাস্তা প্রশস্ত মতো প্রকল্প তিনি নিজ উদ্যোগে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এসব বিষয় তুলে ধরে আমরা মাশরাফীর জন্য নৌকার হয়ে ভোট চাইছি। নৌকার সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্লোটিং ভোটাররাও যেন আসেন ও নৌকায় ভোট দেন।

বিএনপি-জামায়াতের ভোট চাইছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওদের আমি বিশ্বাস করি না। ওরা ভোট দেবে সেই আশাও করি না।

নড়াইল-২ আসনের নৌকার প্রার্থী মাশরাফী বলেন, আর কিছু নয়, নৌকার জন্য ভোট চাইছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাইছি।

এই আসনে জয়ের আশা করছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী খন্দকার ফায়েকুজ্জামান। সরকারবিরোধী বা আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটারদের উপর ভরসা তার। তিনি মনে করেন, সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দেবে না। তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই আশা দেখছি। কারণ নৌকায় কেউ ভোট দেবে না। এন্টি আওয়ামী ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেলে আমরাই বিজয়ী হব।

ভোট স্বচ্ছ হবে বলেই আশা করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখাতে ভোটার উপস্থিতি বেশি দেখানোর চেষ্টা করছে তারা (আওয়ামী লীগ)। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছে এটি দেখাতে তারা আগ্রহী।

নিজের প্রচার নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট। কোনো চাপ অনুভব করছেন না বলেও জানান । নড়াইল ২ আসনে তিনিই সবচেয়ে বেশি নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, নড়াইলে আমার চেয়ে বেশি প্রচার কেউ করেনি। ভুল জায়গায় পোস্টার লাগানোর কারণে আমি একবার জরিমানা দিয়েছি, একবার শো-কজও খেয়েছি।

নড়াইল-১ আসনের নৌকার প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি। তার আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না তিনি। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নৌকার প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায়।

নৌকার প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি বলেন, নির্বাচন ঘিরে আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করি ৭ তারিখ মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে ভোট দিতে যাবে। নির্বাচনের মূল চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মানুষ এই নির্বাচন দেখছে। গণতন্ত্রের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার এক ধরনের প্রয়াস এই নির্বাচন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেওয়া বা না নেওয়া নয়। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে সেটিই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আমি বিশ্বাস করি, আমার নির্বাচনি এলাকায় রেকর্ডসংখ্যক মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য তার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আওয়ামী লীগের ভিশন ২০৪১ পূরণে নড়াইলে অর্থনৈতিক জোন তৈরির উপরে জোর দেওয়া হবে, যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসে ও এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

এছাড়া তিনি নিজেকে শতভাগ সফল দাবি করে বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় একটি পৌরসভা ও ১৯টি ইউনিয়ন। এখানকার নাগরিকরা শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা যেমন পানি-বিদ্যুৎ ও উন্নত রাস্তাঘাটের সুবিধা পাচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বজায় থাকবে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষক, রিকশাচালক থেকে শুরু করে সকল শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম জোরদার করার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবীদের কাছেও আমি নিবেদন জানিয়েছি আমাকে নির্বাচিত করতে। এই জনপদের, বিশেষ করে পূর্ব কালিয়ার মানুষ দাঙ্গাবাজী, সন্ত্রাস, লুটতরাজ, মাস্তানতন্ত্র, জুলুমবাজির জন্য দিশেহারা। মুখ ফুটে অনেকে কথাও বলতে পারে না। অনেকেই ঘরছাড়া। দাঙ্গা এবং মামলার কারণে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। গ্রামের পর গ্রাম টিনের ঘর। মামলার খরচ জোটাতে জোটাতে দালান করা হয়ে ওঠে না। মায়ের কোল খালি হয়ে যায় কিছুদিন পরপর।

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি দেখেছি মানুষকে জীবন ও জীবীকার সংগ্রামে নামানো হলে সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি দাঙ্গাবাজী, জঙ্গিবাদ, লুটতরাজ, অপহরণ বন্ধ করা সম্ভব। তাই ভোটারদের কাছে আমি নিবেদন জানিয়েছি এসব দূর করে একটু শান্তিপূর্ণ এলাকা পেতে তাদের কাছে হাতুড়ি মার্কার জন্য ভোট চেয়েছি। আমি জেতার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এই প্রার্থী। তার ভাষায়, নির্বাচনি প্রচারের শুরুর দিকে বাধার মুখোমুখি হলেও এখন আর নাই। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমার এলাকায় প্রশাসনের কড়া দৃষ্টির মধ্যে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে যাবে। যদি তারা বাধার মুখোমুখি হয়, তা প্রতিরোধের শক্তি আমাদের আছে।

এদিকে, নড়াইল জেলা বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা পড়েছেন ভিন্ন দোটানায়। ব্যক্তি মাশরাফীর জন্য অনেকেই ভোট দিতে আগ্রহী হলেও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না।

তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটারদের ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য গোপনে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার প্রচার চালানোর অভিযোগও করছেন তারা।

ভোট স্বচ্ছ হবে বলেই আশা করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখাতে ভোটার উপস্থিতি বেশি দেখানোর চেষ্টা করছে তারা (আওয়ামী লীগ)। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছে এটি দেখাতে তারা আগ্রহী।

সর্বশেষ খবর