যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যা রুখতে একটি ব্রিজে লাগানো হয়েছে স্টিলের নেট। ১৯৩৭ সালে খুলে দেয়ার পর থেকে প্রায় ২ হাজার মানুষ সেখান থেকে নদীতে লাফ দিয়েছে। নির্মাণের ৮৭ বছর পর আত্মহত্যা রুখতে সেতুটিতে নেট লাগানোর কাজ সম্পন্ন হলো।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদন মতে, প্রশান্ত মহাসাগরের সান ফ্রান্সিসকো উপকূলের মনোরম দৃশ্য দেখা যায় এই গোল্ডেন গেট ব্রিজ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকোর উত্তর প্রান্তকে মেরিন কাউন্টির সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এটি। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু হিসেবেও বেশ নামডাক ছিল সেতুটির। তবে আত্মহত্যা করার সেতু হিসেবেও ব্যাপক খ্যাতি আছে এই গোল্ডেন গেট ব্রিজের।
বহুকাল ধরে এ সেতুটি মানুষ ব্যবহার করে এসেছে আত্মহত্যা করার আদর্শ জায়গা হিসেবে। ১৯৩৭ সালে এটি চালু হওয়ার পর থেকে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ এ ব্রিজের মাধ্যমে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। কিন্তু যেসব মানুষ এখান থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বিগত ২ দশক ধরে তাদের পরিবার ও স্বজনরা নিরলসভাবে এই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে এসেছেন।
২০১৪ সালে ৭৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সেতুটির উভয় পাশে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার লম্বা এবং ২০ ফুট চওড়া স্টিলের নেট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও কর্মকর্তারা অনুমতি দেয়ার ১ দশক পর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। নানা বাধা-বিপত্তির পর সম্প্রতি নেট ফেলার কাজ শেষ করেছেন এখানকার শ্রমিকরা।
বিবিসি বলছে, ব্রিজ থেকে লাফ দেয়ার পরে বেঁচে থাকা প্রায় ৪০ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন কেভিন হাইন্স। তবে নিজের সেই ঘটনার পর থেকে তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধে একজন কর্মী হয়ে উঠেছেন। হাইন্স নিজেও সেতুতে নেট লাগানোর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
হাইন্স বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘যদি সেখানে নেট থাকত, তাহলে আমাকে পুলিশ থামিয়ে নিয়ে যেত এবং অবিলম্বে আমি আমার প্রয়োজনীয় সাহায্য পেতাম এবং কখনোই আমার পিঠ ভাঙত না, কখনোই আমার তিনটি কশেরুকা ভেঙে ফেলতাম না।’
সেতুতে চলাচলরত গাড়ি থেকে এই সুরক্ষা নেট দেখা যায় না। এছাড়া এই নেটগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সমুদ্রের নোনাপানি, তীব্র বাতাস ও কুয়াশাতেও নষ্ট হবে না। এ নেটগুলো আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য বসানো হলেও এখান থেকে লাফিয়ে পড়লে যে কেউ গুরুতর আঘাত পাবেন বলে জানান সেতুটির ম্যানেজার।