আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী দল। এই সন্ত্রাসী দলের রাজনীতি করার অধিকার বাংলাদেশে নেই। কারণ তারা মানুষ পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে, আর ওদের রাজনীতি মানুষ হত্যায়। তাদের কী মানুষ চায় বলেন? তাদের মানুষ চায় না।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যখন জনগণের জন্য উন্নয়ন করি, তখন ওই বিএনপি-জামায়াত করে অগ্নিসন্ত্রাস। রেললাইনের ফিস প্লেট ফেলে দিয়ে, বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যার ফাঁদ পাতে। রেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। মা-সন্তানকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে- এই অবস্থায় আগুনে পুড়ে কাঠ হয়ে গেছে। এই দৃশ্য পুরো বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। আসে আগুন, গাড়িতে আগুন, ঠিক ২০০১ সালে শুরু করেছিল। এরপর ১৩-১৪ একই ঘটনা ঘটায়। এখন আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। আমি ধিক্কার জানাই বিএনপি-জামায়াতকে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমি বরিশালে উপস্থিত হয়েছি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, সেই লক্ষে এখানে উপস্থিত হয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শূন্য হাতে বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখন মাথাপিছু আয় ছিল ৯১ ডলার। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছরের মধ্যে তা ২৭৭ ডলারে উন্নীত করেন। তিনি অসহায়দের জন্য অকাতরে সব বিলিয়ে দেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যা নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছিল। এরপর অবৈধভাবে জিয়া, এরশাদ ক্ষমতায় আসে। তারা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ উন্নয়নে দেশের সোনালী সময় ছিল। দুর্ভাগ্য চক্রান্ত করে ২০০১ সালে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। বরিশালে নেতাকর্মীদের যে নির্যাতন করা হয়েছিল তা অবর্ননীয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল মানুষের সবচেয়ে বড় অন্ধকার যুগ। বরিশাল থেকে ২৫ হাজার লোক গোপালগঞ্জে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বিএনপির দুঃশাসনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে আমাদের ক্ষমতায় রেখেছে। আজ ২০২৩ সাল, আমরা বদলে যাওয়া বাংলাদেশে। আজকে দুর্ভিক্ষ নেই, মঙ্গা নেই। যে মানুষ একবেলা খেতে পারতো না। তারা তিন বেলা খেতে পারছে। বই বিনামূলে বিতরণ করছি। অসহায়দের ভাতা দিচ্ছি। আজকে ১০ কোটি মানুষ উপকারভোগী। আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে শিল্প কলকারখানা চালিয়ে আসছি। ১০ টাকায় কৃষকরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। ১ কোটি ২ লাখ কৃষক অ্যাকাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল এক সময় ছিল শস্য ভান্ডার। আবার আমরা সেই ভান্ডারের সুনাম ফেরাতে সাইলো নির্মাণ করছি। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, বরিশালের সন্তান অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস জনসভা সঞ্চালনা করেন। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় জনসভাস্থল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে পৌঁছান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও আছেন। জনসভা মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরা তাদেরকে স্লোগান ও অভিবাদন বার্তায় বরণ করে নেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। জনসভায় বিভাগের নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দিচ্ছেন।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বরিশালে পৌঁছে সার্কিট হাউসে আসেন। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় যোগ দেন। প্রধান অতিথি মঞ্চে আসন গ্রহণের পর আনুষ্ঠানিক পরিবেশনা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন। সভায় সভাপতিত্ব করছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির সফরকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। নানা রঙের শাড়ি, রঙিন ক্যাপ-পোশাক পরে মাঠে আসেন দলীয় সমর্থকেরা। সঙ্গে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুপুর পৌনে ১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়।