মৌলভীবাজারে ঘন সবুজ অরণ্য, পাহাড়ের বুকে মুগ্ধতা ছড়ানো চায়ের বাগান, লেক আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সঙ্গে মিল রেখে চা–গাছ দিয়ে মোড়ানো মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় ১৫ ডিসেম্বর। ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপলক্ষে পুরো মৌলভীবাজার জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। কমলগঞ্জে ধারণ করা হলেও দর্শকেরা আসেন দূরে অবস্থিত বিভিন্ন উপজেলা থেকে। স্থানীয় পর্যায়ে সাড়া ফেলা অনুষ্ঠানটি আজ দেখতে পাবেন দেশ–বিদেশের দর্শক। আজ শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে। বরাবরের মতো আজকের ‘ইত্যাদি’ রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে তারই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশন।
ফাগুন অডিও ভিশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধিকাংশ সময়ই রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও মৌলভীবাজারের নৈসর্গিক রূপ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে এবার দিনের আলোর পড়ন্ত আভায় ইত্যাদির ধারণ শুরু হয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় বেলা তিনটা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠান ধারণ চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। তীব্র শীত উপেক্ষা করে দর্শক এই দীর্ঘ সময় উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠান ধারণ।
এবারের অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক ভাষায় একটি ভিন্ন রকম প্রেমের গানে কণ্ঠ দেন মৌলভীবাজারের সন্তান কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী ও সিলেটের সন্তান তসিবা। গানটির কথা লিখেছেন রামাচরণ, সুর করেছেন আকাশ মাহমুদ। এ ছাড়া মৌলভীবাজারকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদির সংগীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন মৌলভীবাজারেরই স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেন খাজা সালাউদ্দিন, কণ্ঠ দেন পুলক, তানজিনা রুমা, মোমিন বিশ্বাস ও নোশিন তাবাসসুম স্মরণ।
দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান মৌলভীবাজারকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকদের ভেতর থেকে চারজনকে নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় বাঙালি ও মণিপুরি সম্প্রদায়ের কয়েকজন নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্রশিল্পী।
শিকড়সন্ধানী ইত্যাদি সব সময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচারবিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি প্রতিবেদন। রয়েছে মৌলভীবাজারের ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ব্যতিক্রমী পলিথিনের হাটের ওপর রয়েছে আর একটি জনসচেতনতামূলক প্রতিবেদন। শেষে রয়েছে একজন আদর্শ মায়ের হৃদয়ছোঁয়া স্বপ্নের গল্প। এবারের বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ‘এন সিউল টাওয়ার’-এর ওপর একটি প্রতিবেদন।
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের মঞ্চে যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে রয়েছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। চিঠিপত্র বিভাগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্যচিত্র ও স্মারক সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত শ্রীমঙ্গলের বিকুল চক্রবর্তীর কার্যক্রম তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়।
নিয়মিত অন্যান্য পর্বসহ রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু নাট্যাংশ। খাঁটি মাটির মানুষ, নিত্যপণ্যের মূল্যে নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস, দুয়ারে খাবারের দুশ্চিন্তায় অভিভাবক, তারকা বাজার, মূল্যহীনকে মূল্যবান বানানোর পরিণতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের করুণ হাল, ঘরোয়া অশান্তি, অযথা কথা, ওপরে ওঠার শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন সোলায়মান খোকা, জিয়াউল হাসান কিসলু, আবদুল্লাহ রানা, শুভাশিস ভৌমিক, মাসুম বাশার, শফিক খান দিলু, মুকিত জাকারিয়া, জিল্লুর রহমান, শবনম পারভীন, মোমেনা চৌধুরী, জাহিদ শিকদার, নিপু, কামাল বায়েজিদ, আমিন আজাদ, বিলু বড়ুয়া, ইকবাল হোসেন, শাহেদ আলী, তারিক স্বপন, জামিল হোসেন, সুজাত শিমুল, সাদিয়া তানজিন, সুবর্ণা মজুমদার, সাবরিনা নিসা, সজল, দেবাশীষ মিঠুসহ অনেকে।