‘অভিনয়ে নিয়মিত না হয়েও টাকা কোথায় পান’ এমন প্রসঙ্গে সম্প্রতি ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। ব্যক্তিগত বিষয়ে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিনেত্রীর ভুল ব্যাখ্যা করছে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টা নাগাদ ফারিয়া তার ফেসবুকে এই নিয়ে এক দীর্ঘ পোস্ট দেন। ওই পোস্টে নাম প্রকাশ না করে এক সাংবাদিকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ফারিয়া জানান, এখন অভিনয়ে নিয়মিত না হওয়ায় তার সে রকম আয় নেই। তাহলে অভিনেত্রী কীভাবে চলে এমন প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। এটি কীভাবে একটি নিউজ হতে পারে সে প্রশ্নও তোলেন ফারিয়া তার পোস্টে।
বেশ কয়েক দিন ধরে এ ইস্যু নিয়ে বিরক্ত ছিলেন ফারিয়া। তাই ফেসবুকে এর আগেও সরব হতে দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রীকে। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু কিছু সংবাদ শিরোনাম দেখলে চোখে পানি চলে আসে। ওই পোস্টে ফারিয়া আরও বলেছিলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি ভিক্ষা শুরু করবো! কিছু বলার নাই।’
সময়ের পাঠকের জন্য অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার বুধবার ( ২৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টার পোস্ট তুলে ধরা হলো-
আমার অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত কিছু সংবাদ দেখে আমি যারপরনাই বিরক্ত।
আমি সাধারনত নির্দিষ্ট কয়েকজন মানসম্পন্ন সাংবাদিক ব্যতীত অন্য সাংবাদিকদের সাথে কোনো ধরনের আলাপচারিতায় যেতে চাই না কারণ তারা আমার সাক্ষাৎকার কিংবা কথোপকথন থেকে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা এবং তথ্যবিকৃতি করে সংবাদ উপস্থাপন করে মূলত বাড়তি বাজার কাটতির জন্য, সাথে রয়েছে চটকদার শিরোনাম।
সম্প্রতি একটা লম্বা বিরতির পর আমার অভিনীত একটি ওয়েবসিরিজ এসেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ , নতুন এই কাজের প্রমোশনের জন্য আমি খুব স্বল্প পরিসরে ইন্টারভিউ দিয়েছি, এমনকি হইচই থেকে নির্ধারিত বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও আমি যোগ দেইনি এই ভেবে যে, আমি যাই বলি, তারা যা ইচ্ছা তা শিরোনাম দিয়ে সংবাদ করে, যা আমার ও আমার পরিবারের জন্য বিব্রতকর !
বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্তটা, যদিও এটি আমার পক্ষ থেকে কিঞ্চিৎ অপেশাদার আচরণ ছিল, তবুও আমি হইচই এর কাছে কৃতজ্ঞ তারা আমার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে। গত শনিবার একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করেন, আমি বলি “মোবারকনামা” ছাড়া আমি অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহী না এই মুহূর্তে। কথার এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন নাটকে কেন কাজ করছি না? জবাবে আমি জানাই যেসব কাজ আসছে আমার কাছে, যেসব নামে কাজ আসছে আমি সেসব নাটকে কাজ করতে চাই না । আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, ঠিক সেই ধরনের স্ক্রিপ্ট আসছে না, বিষয়টা এমন না যে কাজ করতে চাই না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বর্তমানে আমি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করছি, যা একদম শেষের দিকে, গত দুইবছর স্নাতকোত্তর ঠিকভাবে করার জন্যই কিন্তু আমি কাজ থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আমি ২টা ওয়েব ফিল্ম, একটা ওয়েবসিরিজ, ২/৩টা ওভিসি ও বিজ্ঞাপন করেছি। প্রথমদিকে আমি “মা বাবা ভাই বোন” নামের একটা সিরিজে কাজ করতাম, কিন্তু শুটিং/পড়াশোনা একসাথে করতে না পেরে শেষের দিকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এ কাজটা শেষ হাওয়ার পর সিদ্ধান্তে আসি, আমি সবকিছু মিলিয়ে এত চাপ আর নেব না! একটা দীর্ঘ বিরতির পর যেহেতু আবার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা যেহেতু শুরু করেছি, তা ঠিক ঠাকভাবে শেষ করেই তারপর কাজে ফিরব।
হ্যাঁ, এখন প্রতিদিন শুটিং করি না আগের মতো অবশ্যই আমার আয় আগের মতো না, অবশ্যই আমাকে আমার সেভিংস থেকেও অনেক সময় খরচ করতে হয়, সেইটাতো স্বাভাবিক একটা ঘটনা! মানুষ তো টাকা জমায় প্রয়োজনেই।
এটা একটা সংবাদ কিভাবে হতে পারে? আমি সংসার চালাই এই ইনফরমেশনটা সাংবাদিকরা কই পেলেন?
আমি সিঙ্গেল, আমার কোনো সংসার নাই, পরিবার বলতে আমি আর আমার মা, আমার মা তার নিজ বাড়িতে থাকেন, আমার বাবা একজন চিকিৎসক এবং প্রথমশ্রেণির উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। আল্লাহতালার রহমতে আমার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা এমন যে সম্ভবত আমি আর কখনো আয় না করলেও কখনো অর্থনৈতিক কোনো সমস্যার সমুখীন আমাকে হতে হবে না।
সেইটাও মূল কথা না। শুধুমাত্র একটা ক্লিকের জন্য বিব্রতকর শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের একটি ট্রেন্ড চালু হয়েছে, আমি তার প্রতিবাদ জানাই। সংবাদ প্রকাশের এটা কোনো সুস্থ স্বাভাবিক চর্চা হতে পারে না।