দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। ফের ক্ষমতায় গেলে আগামী ৫ বছরে ২ লাখ যুবককে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ দেয়ার অঙ্গীকার করেছে দলটি।
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারের স্লোগান : স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।
তরুণ ও যুবকদের জন্য ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তরুণসমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। জনমিতিক পরিবর্তনে ২০৪১ সালে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স হবে ৩০ বছরের কম; ১৫-২৯ বছর বয়সের তরুণের সংখ্যা কমবেশি ২ কোটি। বাংলাদেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখবে।
কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত করা হবে। জেলা ও উপজেলায় ৩১ লক্ষ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত তরুণ ও যুবসমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
অনলাইন শ্রমের বাজারে বিভিন্ন পেশাদারি সেবাসমূহ যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ, পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা, পে-রোল, আইটি সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ আরও নতুন নতুন ক্ষেত্র সংযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেশের সকল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে।
তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে।
শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭.৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ যুবকের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে দেশে-বিদেশে বিকাশমান কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে।
যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং ‘স্মার্ট ইয়ুথ হাব’ গড়ে তোলা হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেবার জন্য বিশেষ সেল গঠন করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে।
অসহায়, অসমর্থ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম যুবদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
মাদক সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নিরসন এবং মাদকাসক্তদের ও মাদক ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে ‘Centre of Excellence’ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে।
উন্নয়ন ও অগ্রগতি
১. যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘জাতীয় যুবনীতি, ২০১৭’ প্রণয়ন এবং ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং যুব বিনিময় কর্মসূচিসহ আরও অনেক কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে।
২. বেকারত্বের হার ২০০৯ সালে ছিল ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা ৩.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
৩. যুবসমাজকে সঠিক দিক-নির্দেশনা, কর্মোপযোগী কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে যুব উন্নয়ন পরিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে।
৪. যুবসমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় যুবদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণোত্তর আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বীকরণ, যুবঋণ প্রদান, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি কর্মসূচি চালু হয়েছে।
৫. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্ব ও বিশ্বজনীন স্বীকৃতির প্রভাব যুবদের মধ্যে প্রতিফলনের লক্ষ্যে ২০২২ সাল থেকে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তন করা হয়েছে।
৬. কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৩ কোটি ৩১ লক্ষ যুবকে ৮৩টি ট্রেডে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৫৪ হাজার জন আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে।
৭. গত ৫ বছরে ৪ হাজার ৬৪টি যুব সংগঠন নিবন্ধন করা হয়েছে। যুবকল্যাণ তহবিল থেকে বিগত ৫ বছরে ৯৩০টি যুব সংগঠনকে ১৪ কোটি ৮১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
৮. প্রশিক্ষিত যুবদের প্রকল্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য ঋণ কর্মসূচির আওতায় ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ১২ লক্ষ ১০ হাজার উপকারভোগীকে মূল ও ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল থেকে ২ হাজার ৫৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
৯. যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এ পর্যন্ত দেশের ৪৭টি জেলার ১৩৮টি উপজেলা ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় এসেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবদের মধ্যে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার জন বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হয়েছে।
১০. তরুণদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’ গঠন করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে যুব কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নে ‘জাতীয় যুব কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। জাতীয় যুব কাউন্সিলের সদস্যরা দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
১১. নিরাপদ ও টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দক্ষ চালক সৃষ্টির লক্ষ্যে যুবদের যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫০০ জন দক্ষ যানবাহন চালক তৈরি করা হয়েছে।
১২. তথ্যপ্রযুক্তি ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী দক্ষতা উন্নয়নে মোবাইল ভ্যানে তৃণমূল পর্যায়ে পশ্চাৎপদ, অনগ্রসর যুবদের কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
১৩. দেশের যুব সমাজের উন্নয়নকল্পে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটট, সাভার, ঢাকায় ৭ হাজার ৫১৭ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ১৬টি সংক্ষিপ্ত কোর্স ও ৩টি ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে।
১৪. গত ৫ বছরে বেশ কিছু আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে: ‘যুব উদ্যোক্তা নীতিমালা, ২০২২’; ‘যুব প্রশিক্ষণ নীতিমালা,২০২২’; শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮; যুব উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণ নির্দেশিকা, ২০২০; জাতীয় যুব কাউন্সিল বিধিমালা, ২০২১; যুব প্রশিক্ষণ নীতিমালা, ২০২২; যুব উদ্যোক্তা নীতিমালা, ২০২২; ক্রীড়া পরিদপ্তর এবং শারীরিক শিক্ষা কলেজ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২২; শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড নীতিমালা, ২০২২; জাতীয় যুব পুরস্কার নীতিমালা (সংশোধিত), ২০২৩।
১৫. অনলাইন শ্রমের বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম (২১ শতাংশ) সেবা প্রদানকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ৬ লক্ষ ৫০ হাজার শিক্ষিত যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদের অর্জিত আয় ৫ মিনিটের মধ্যে দেশে আনার জন্য ‘প্রিয়পে’ চালু করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৬৬৫ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে।