দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গত ১৫ বছর ধরে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) নির্বাচনী প্রচারণায় পীরগঞ্জের এক জনসভায় তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আগে কী অবস্থা ছিল, আজ কী অবস্থা। যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মানুষের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করছি। দেশের মানুষকে শিক্ষিত করতে এবং প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনশক্তি গড়তে কাজ করে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলার দুঃখি মানুষের উন্নয়নে সারা জীবন কাজ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা সে সময় আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। কিন্তু আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের জন্য দেশে আসতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে কৃষকদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কৃষকদের ভর্তুকি দিয়েছি। বয়স্কভাতা, স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলেছি। কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করেছি। আমরা রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করে সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করছি।
রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পীরগঞ্জের সঙ্গে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছি। ওয়াজেদ মিয়া সেতু করে দিয়েছি, তার সুফল জনগণ পাচ্ছে। রেল, সড়কসহ বিভিন্ন ব্রিজ তৈরি করে গতি এনেছি। যুবকরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা করতে পারছে। আর এসব হয়েছে নৌকাকে ভোট দেয়ার জন্য।
প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ করেছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে কারও হাতে মোবাইলফোন ছিল না। এখন হাতে হাতে মোবাইলফোন। ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আমরা তরুণদের প্রযুক্তি জ্ঞানের ব্যবস্থা করেছি। এতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
শিরীন শারমিনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের প্রার্থী কোনোদিন ফার্স্ট থেকে সেকেন্ড হননি। বিদেশ থেকেও তিনি পড়ে এসেছেন। আমরা দেশে এমন শিক্ষিত সমাজ গড়তে চাই। পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি একডেমিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। কি বাহে মোক একখান ভোট দিবানা? এই যে আমার মেয়ে শিরীন শারমিনকে দিয়ে গেলাম। তাকে ভোট দিলেই আমাকে ভোট দেয়া হবে। সে জয় ও পুতুলের বোন। তাকেই নির্বাচিত করুন আবারও৷
‘শিরীন শারমিন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতির পরেই তার অবস্থান। এরমধ্য দিয়েই বোঝা যায় পীরগঞ্জবাসী কতটুকু সৌভাগ্যবান’, যোগ করেন তিনি।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভামঞ্চে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বক্তব্য দেন। নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।
জনসভায় যোগ দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জের ফতেহপুরে তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সেখানেই তিনি দুপুরের খাবার খান।
এরআগে, সকাল সোয়া ১০টার দিকে গণভবন থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১১টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে সড়কপথে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে পৌঁছান। সেখানে জনসভায় অংশ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পথে মিঠাপুকুর উপজেলায় রংপুর-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী রাশেক রহমানের একটি নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।