যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে বারবার, সেই মার্কিন প্রশাসন এখনও দেয়নি নিজ দেশের শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার। সেখানের শ্রমিকরা এখন পাননি ন্যায্যতার হিসাব বুঝে নিতে মালিকপক্ষে সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষমতা। এমনটাই বলছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও।
এ অবস্থায় মার্কিনিদের অন্যের দোষ না খুঁজে ন্যায্য দামে পণ্য কেনার পাশাপাশি নিজেদের চরকায় তেল দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শ্রমিক নেতারা।
অন্যদিকে শিল্প মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশে শ্রম ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
ইতিহাস বলছে, ১৮৮৬ সালে ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল মার্কিন পুলিশ। বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ সেই দেশ যুক্তরাষ্ট্র এখনও স্বীকৃতি দেয়নি দেশটির শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকারকে। এমনকি আইনগতভাবে ওই দেশের শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে করতে পারে না কোনো দর কষাকষি। এমন প্রমাণই দিচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও।
আইএলও’র ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ১০টি কনভেনশনকে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। এরমধ্যে এক নম্বরে থাকা এইটটি সেভেনে বলা হয়েছে শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে সংগঠন করতে দেয়ার কথা। আর শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগঠিতভাবে দর কষাকষির নিশ্চয়তা দিতে বলা হয়েছে দুই নম্বরে থাকা আইএলও কনভেনশন নাইনটি এইটে।
১৯৭২ সালেই বাংলাদেশ আইএলও’র এই দুইটি বিধানকে মেনে তা কার্যকর করলেও, তা এখনও মানেনি যুক্তরাষ্ট্র।
অথচ এই মার্কিন প্রশাসনই শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে গেল ১৬ নভেম্বর বিশ্বকে দিয়েছে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি। এক মাসের মাথায় ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে নিজ দেশের আমদানিকারকদের কঠোর হতে বলেছেন আট কংগ্রেসম্যান।
বিষয়টিকে অন্যায্য হস্তক্ষেপ বলছেন দেশের উদ্যোক্তারা। বিকেএমই’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সময় সংবাদকে বলেন, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। শ্রমিকদের দর কষাকষির অধিকারের বিষয়েও স্বাক্ষর করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তাই শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলারই অধিকার তাদের নেই।
এ বিষয়ে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ‘হিপোক্রেসি’। মার্কিন প্রশাসনের উচিত আইএলও কনভেনশন মেনে তাদের দেশের শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের পথ থেকে বাধা দূর করা।
শ্রমিকদের মতে, অন্য দেশে শুধু শুধু খবরদারি না করে শ্রমিকরা যেন ভালো থাকে সে ব্যবস্থা করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। সেজন্য উৎপাদিত পণ্য যেন মার্কিন ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে কেনেন সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।