স্টাফ রিপোর্টার- পাঁচ বছর আগেও ছিলো আবাদী জমি। সেখানে ফলতো বিভিন্ন ধরণের ফসল। কিন্তু এখন সেটা বোঝার উপায় নেই। দেখে মনে হবে যেন উন্মুক্ত কয়লার খনি। এমনই চিত্র দেখা যায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ভাতারিয়া গ্রামে।
এলকাবাসী জানান, পাঁচ বছর আগে এলাকার রেজাউল করিম লাভলু নামে এক ব্যক্তি গ্রামের রাস্তার পাশে প্রায় তিন বিঘা ফসলী জমিতে পুকুর খনন করেন। সেখানকার মাটি বিক্রি করেন আশেপাশের ইটের ভাটাগুলোতে। মাটি কাটা শেষ হলে ড্রেজার দিয়ে শুরু করেন বালু উত্তোলন। এর ফলে পাশের জমিগুলোতে ভাংগন শুরু হয়। কিন্তু তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না জমির মালিকেরা। তার হুমকীতে আতংকে থাকেন এলকাবাসী। প্রতিবাদ করলে মেলে নির্যাতন। তাই বাধ্য হয়েই তারা লাভলুর কাছে ফসলী জমি বিক্রি করে দেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে পুকুরের পরিধি বাড়তে থাকে। এখন তা পঁচিশ বিঘা ছাড়িয়ে গেছে।
এলাকার গঞ্জের আলী (৬০) বলেন, “ওই মাঠে আমার সাড়ে ৩ বিঘা জমি আছে। জমি ঘেসে বালু তোলার কারণে বার বার মাটি ধ্বসে যায়। জমিতে পানি দিলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করেছে। আমি এখনও করি নাই। একাই প্রতিবাদ করছি। কিন্তু এভাবে কতদিন জমি রক্ষা করতে পারব জানি না।“
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন,”এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ ট্রাক বালি সরবরাহ করা হয়। বেশ কয়েকবার সরকারি লোকজন এসে জরিমানা করে। কয়েক দিন পর থেকে আবারও বালু তোলা শুরু হয়। মাঝে মাঝে পুলিশ আসে। কিন্তু কিছু বলে না। তাই আমরাও কিছু বলার সাহস পাই না। এর আগে প্রতিবাদ করায় একজনকে লাভলু অনেক মারধর করেছে। কোন বিচার হয়নি।“
তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন লাভলু। তিনি বলেন, “এখানে আমার নিজের ৫০ বিঘা জমি আছে। এখানকার জমির মালিকেরা অনেক দূরে থাকেন। তাই তারা স্বেচ্ছায় আমার কাছে জমি বিক্রি করেছেন।“
বালু উত্তলনের বিষয়ে তিনি বলে, “এখানে কোন আবাদী জমি ছিলো না। আগে থেকেই বিল ছিলো। গরুর খামার করার জন্য সামান্য বালু তুলে রাস্তার পাশের জায়গা উঁচু করেছি। সরকার আইন করার পরে সব বন্ধ রেখেছি।“
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, “বালু তোলার সংবাদ পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ভাতারিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কাউকে না পাওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তবে বালু উত্তোলনের কিছু সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।“
তিনি আরও বলেন, শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করে মাটি বা বালু উত্তোলন করা সম্ভব না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণকে নিয়মিত মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিপূর্বে কয়েকজন ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তাও আদালতে মামলা করেছিলেন। এসকল কার্যক্রম জোরদার করার জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে।“