নারীর শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। তারা বলছেন, দেশের নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। চলমান নির্বাচনী সহিংসতায় নারী ও শিশুদের অগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নারীর শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হলেও বাজেট পর্যাপ্ত নয়।
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে নারীদের নেটওয়ার্কস এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। নারী প্রগতি সংঘ এই সংলাপের আয়োজন করে। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউএন উইং) মো. এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ইউএন ওমেন’র ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ নবনীতা সিনহা এবং আলোচক ইউএন ওমেন’র প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড রিপোর্টিং এনালিস্ট তানিয়া শারমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. আরিফুর রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাদের শেখ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ওসমান ভুইয়া, সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার এডুকেশনের ঊর্দ্ধতন সহকারী সচিব আম্বিয়া সুলতানা, মানব প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদা শেলী, সিডের নির্বাহী পরিচালক সারথী সাহা, অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলি, প্রগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা, রাসিনের নির্বাহী পরিচালক আসমা আক্তার, পল্লিশ্রী’র নির্বাহী পরিচালক শামিমা আক্তার, মুক্তি কুষ্টিয়া’র নির্বাহী পরিচালক মমতাজ আরা বেগম, অর্জন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহুয়া মঞ্জুরী প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমি।
এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকার নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় আন্তজার্তিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে লক্ষ্যে ছয়টি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৯-২০২২) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব কাজে সমন্বয় সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সমন্বয় সাধন করার দায়িত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে এবং পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, নারী সংগঠন, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের সমন্বয়েও একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হবে। যারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সে অনুযায়ী এ বিষয়টি জাতীয় বাজেটে আওতাভুক্ত করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নবনীতা সিংহ বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে। নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় অন্যান্য কারণগুলির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনেও বড় ভূমিকা রাখছে। বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে একটি নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে হবে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিভিল সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মৌলবাদ মোকাবিলা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রতিরোধ এই বিষয়গুলোর ওপর আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রতিরোধও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, প্রায় ৮৭ ভাগ নারী গৃহে নারী নির্যাতনের শিকার। এক্ষেত্রে ধর্মও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উত্তরাধিকার আইন বাংলাদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘার্ষিক। এছাড়া জেন্ডার বাজেটও অত্যন্ত কম। বাংলাদেশের জেন্ডার বাজেট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই বরাদ্দ নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে হবে।