সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার কোটায় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একে সংবিধান বিরোধী আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একই দাবিতে ভিসি বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা; অতি দ্রুত এই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা; হিজড়া জনগোষ্ঠীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রভৃতি।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের চার দফা অনুযায়ী যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের জন্য বিশেষ কোটার ব্যবস্থা করা যায়। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজড়াদের জন্য কোটা রয়েছে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যও কোটা রয়েছে। সমাজে তারাই কোটা দাবি করতে পারে, যারা সমাজে অনগ্রসর গোষ্ঠী। যারা স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে বিকৃত করে অনগ্রসর সোসাইটিতে পরিণত করে, তাদেরকে কখনোই আমরা এই সাংবিধানিক সুযোগ নিতে দিবোনা। এই শিক্ষার্থী বলেন, ট্রান্সজেন্ডার কালচার এলজিবিটি এর অন্তর্ভুক্ত। অতএব, ট্রান্সজেন্ডারকে কোটা দেওয়া মানে এলজিবিটি কালচারকেই প্রমোট করা বা এর প্রচার প্রসারেরই নামান্তর।
জাকারিয়া আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততির জন্য কোটা রয়েছে। এখানে এর সাথে যদি ট্রান্সজেন্ডার কোটাকে স্থান দেওয়া হয়, তাহলে এটা মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে এবং সত্যিকার অর্থেই যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের সাথে বেঈমানী বা তাদের অধিকার সংকুচিত করারই নামান্তর। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ট্রান্স কালচারের উৎপত্তি যে দেশে স্বয়ং সেই পশ্চিমা দেশগুলোতেই ক্ষোভের দানা বেঁধেছে। এরই প্রেক্ষিতে রাশিয়া আইন করে এলজিবিটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি আইসিসিও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, মানুষ নারী-পুরুষের বাইরে যে কোনো জেন্ডার হতে পারেনা, এটা কমন সেন্সের বিষয়। কিন্তু, অত্যন্ত দু:খের বিষয় হলো যে, আমাদের সমাজের কিছু মানুষের সেই কমন সেন্সের ধারণাটুকুও নেই। যার কারণে, আমরা দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডারকে কোটা দিয়ে তাদেরকে প্রমোট করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, ট্রান্সজেন্ডার হলো বিশ্ব মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ, এর মেইন উদ্দেশ্য হলো ফ্যামিলিকে ধ্বংস করে দেওয়া। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি পুরোটাই ফ্যামিলি বেইজড। যেই সংস্কৃতি আমাদের ফ্যামিলি প্রথাকে নষ্ট করে সেই সংস্কৃতি আমরা প্রচার করতে দিবোনা।
শামসুন্নাহার হলের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যই মূলত কোটা সিস্টেম। এক্ষেত্রে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের যারা আছেন তাদের জন্য এটা যুক্তিযুক্ত। তাদের দৈহিক গঠনে তাদের কোন হাত নেই, বরং সেটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। পরিস্থিতি বিবেচনা করলেও দেখা যায়, তারা আসলেই সুবিধা বঞ্চিত এবং অনগ্রসর। কিন্তু, ট্রান্সজেন্ডার দাবি করাদের কোটা প্রদান অযৌক্তিক। এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা হুমকির সম্মুখীন হবে। কারণ, একজন ছেলে মানসিকভাবে যখন নিজেকে মেয়ে ও ট্রান্স নারী দাবি করবে তখন তাকে মেয়েদের হলে সীট দেওয়া হলে মেয়েদেরকে তাদের সাথে বেড বা রুম শেয়ার করতে হবে। এটা কখনোই সম্ভব নয়। তাদের সামনে নামাজ পড়লে নামাজেও সমস্যা হবে।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে একজন ট্রান্সমানুষ কখনোই তার শরীরের শতভাগ পরিবর্তন করতে সক্ষম নয়। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ তারা পরিবর্তন করতে পারে। বাকি ৮০ শতাংশই তাদের অপরিবর্তিত থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টা থেকে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জোবায়ের বলেন, ট্রান্সদের মতো বিকৃত মস্তিষ্ক ধারীদের কোটা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হাসির পাত্রে পরিণত করা হয়েছে। সারাদেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তামাশা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজর দিলে দেখা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কতটা উপহাসের বিষয় হিসেবে নিয়েছে।