গাইবান্ধায় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সংগঠনের জেলা কার্যালয় এখন কর্মী–সমর্থকদের পদচারণে মুখরিত।
অন্যদিকে ৫৩ দিন ধরে তালা ঝুলছে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। গ্রেপ্তারের ভয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা বাড়ির বাইরে রাত কাটাচ্ছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি, সম্পাদকসহ স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু নেতা এখন কারাগারে। যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরা ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করে গ্রেপ্তার করতে পারে।
জেলা বিএনপির কার্যালয়টি গাইবান্ধা শহরের ব্যস্ততম সার্কুলার রোডে অবস্থিত। গত ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। এর প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ওই দিন (২৯ অক্টোবর) ছিল বিএনপির দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি। হরতালে পিকেটিং করার সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী ও জেলা যুবদলের সভাপতি রাগীব হাসান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিন দলীয় কার্যালয় থেকে একজন নেতা ও এক অফিস সহায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্ত হন।
জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসানকে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা থেকে এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবীকে ২৯ অক্টোবর গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের ঢাকায় ২৮ অক্টোবরের পুলিশ হত্যা মামলায় আসামি দেখানো হয়। তখন থেকে মইনুল হাসান ও মাহমুদুন নবীকে ঢাকার কারাগারে রাখা হয়। পরে ঢাকা থেকে মাহমুদুন নবীকে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আনা হয়েছে।
এ ছাড়া মাহমুদুন নবীর সঙ্গে জেলা যুবদলের সভাপতি রাগীব হাসান চৌধুরীও গত ২৯ অক্টোবর গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার হন। তাঁকে ১ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা শহরে একটি দোকান ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা, বিস্ফোরকদ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন থেকে তিনি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আছেন।
এদিকে গাইবান্ধা জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ শতাধিক নেতা–কর্মীকে সম্প্রতি গাইবান্ধা শহরে সংঘটিত ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, বিস্ফোরকদ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শহিদুজ্জামান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, জেলা ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার জাকারিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান; জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী। তাঁরাসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা পলাতক রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা বলেন, যাঁরা কাগারের বাইরে কিংবা এলাকায় আছেন, তাঁরা গ্রেপ্তারের ভয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। একই কারণে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে বসতে পারছেন না।
আরেক নেতা বলেন, অপরাধ না করেও তাঁদের পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি পোড়ানো, সন্ত্রাস, পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। যাঁদের আসামি দেখানো হয়েছে, তাঁরা মুঠোফোন বন্ধ রেখে পলাতক আছেন। কারণ, ফোন চালু থাকলে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রেপ্তার করে। ফলে ব্যক্তিগত কাজেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যাচ্ছে না। পলাতক অনেক নেতার পরিবার অসহায় জীবন যাপন করছে।
২০১৪ সাল থেকে চলতি সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে তিন শতাধিক মামলা হয়েছে বলে জানান জেলা বিএনপির সহসভাপতি আইনজীবী কাজী আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব মামলা করা হয় সরকারি কাজে বাধা, সন্ত্রাস, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ ২০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের এক বিএনপি নেতা বলেন, পুলিশ প্রায়ই বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। ফলে গ্রেপ্তারের ভয়ে এখনো অনেক নেতা–কর্মী বাড়িতে ঘুমান না। আজ এ বাড়ি তো কাল ও বাড়ি—এভাবে তাঁরা স্থান পাল্টিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। অনেকে দিনে লুকিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন। মামলার কারণে অনেকে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
এ সম্পর্কে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদেরকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।