Homeজাতীয়জাপার সঙ্গে জোট হয়নি, সমন্বয় হয়েছে: ওবায়দুল কাদের

জাপার সঙ্গে জোট হয়নি, সমন্বয় হয়েছে: ওবায়দুল কাদের

জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট হয়নি, সমন্বয় হয়েছে। এটা নির্বাচনী কৌশল। আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আসন সমঝোতার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। ফলে জোট করার প্রয়োজনীয়তা নেই। জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমন্বয় হয়েছে। এটা নির্বাচনী কৌশল।

জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে প্রতিপক্ষ কারা, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে তারা (জাপা) সাপোর্ট (সমর্থন) চেয়েছে। আরও বড় সংখ্যায় আসন চেয়েছিল। আমরা ২৬টি আসনে সমঝোতা করতে পেরেছি। সে জন্য আমরা নৌকা প্রত্যাহার করেছি। বাকি আসনগুলোতে তারা (জাপা) লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। আসন সমঝোতা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনেও এমন সমঝোতা হয়েছিল। তবে এবার আমরা খুব কমই সহযোগিতা করতে পেরেছি।’

দেশের জনগণ উন্মুখ হয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৮৬ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। স্বতন্ত্র আছেন ৩৫৭ জন। নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশা তাঁর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের এক বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি (নজরুল) বলেছেন, সোমবারের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে কারা এমপি হচ্ছেন। এ ধরনের ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নির্বাচন আসলে বিএনপির আমলেই সম্ভব। তারা (বিএনপি) তো বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ-হুদা ছাড়া প্রার্থীই পাননি। তিনি (নজরুল) এখন জ্যোতিষী-গণকের ভূমিকা নিচ্ছেন। এতই যদি ভবিষ্যৎ পড়তে পারেন, তাহলে জানান, কবে তারেক রহমান দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবেন।

প্রচার শুরু ২০ ডিসেম্বর

ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী বুধবার (২০ ডিসেম্বর) হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে সিলেটে নির্বাচনের প্রথম দলীয় জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তা ঘোষণা করবেন।

কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে

বিএনপি নির্বাচনে এলে দলটির কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি দেওয়া-সংক্রান্ত কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (রাজ্জাক) যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বক্তব্য। আওয়ামী লীগ কোনো দেউলিয়া দল নয়। আওয়ামী লীগ দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গ করে, এ ধরনের উদ্ভট প্রস্তাব বিএনপিকে দেবে, এটা সঠিক নয়। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকার দেয়নি, দলও দেয়নি।’

কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে দল কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলই সিদ্ধান্ত নেবে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না। আর কীভাবে ব্যবস্থা নেবে, সেটাও দলের ব্যাপার।

বিএনপির ২০ হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে থাকার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা আমরা স্বীকার করি না। তাদের (বিএনপি) জেলে আছে কত? হিসাবটা আমি মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে অনেকবার চেয়েছি। একটা উদ্ভট সংখ্যা বলে দিল, সেটা সবাই বিশ্বাস করবে, এমন নয়। এত লোক গ্রেপ্তার হয়নি। আর যারা পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, হাসপাতালে হামলা করেছে, তাদের তো আইনের আওতায় আসতেই হবে। কাউকে নির্বাচনে আনার জন্য অপরাধকে ক্ষমা করতে হবে, এমন দল আওয়ামী লীগ নয়।’

৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের সমালোচনা

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ কি তাঁরা (৪০ বিশিষ্ট নাগরিক) সাপোর্ট করেন? যে বুদ্ধিজীবীরা আজ জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ সাপোর্ট করছেন, তাঁরা আসলে বিএনপির দালাল। ২৭টি দল (নির্বাচনে) অংশ নিচ্ছে, তারপরও বলছেন একতরফা নির্বাচন। আসলে বিএনপির জন্য তাঁদের মন কাঁদে। দেশের জনগণের প্রতি তাঁদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এ নির্বাচনে নাকি প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অসম্ভব হয়ে যাবে। আসলে এ বুদ্ধিজীবীরা বিএনপির রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমি তাঁদের বলব, তাঁদের এই বিবৃতি দেওয়ার আগে উচিত ছিল, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো।’

বিবৃতি যখন দেওয়া উচিত ছিল, তখন বুদ্ধিজীবীরা তা দেননি বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, তাঁদের (বুদ্ধিজীবী) উচিত ছিল, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তিরস্কার করা। তাঁরা কেন জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে অপারগ? দেশে যে নাশকতা হচ্ছে, গাজীপুরের রেললাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, পুলিশকে মারা হলো, আনসারকে মারা হলো, আদালতের এজলাসে গিয়ে হামলা চালানো হলো, এতগুলো বাসে আগুন দেওয়া হলো, ট্রেনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হলো—এসব ব্যাপারে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক নীরব কেন?

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর