সকাল হতো তখন এক অজানা আতঙ্ক নিয়ে! রাত নামতো ভয়াবহ বিভীষিকা ছড়িয়ে। কখন আগুনে পুড়ে যায় কেউ। কখন হারিয়ে যায় কারও জীবিকা। নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনের নামে দেশে চলছিলো এমন ভয়ানক অবস্থা। দশ বছর পর আবার আরও একটি নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন! বিএনপি কর্মীরা গাজীপুরে উপড়ে ফেলে দিয়েছেন রেললাইন। কর্তৃপক্ষ বলছে নাশকতার উদ্দেশ্যে এ কাজ। আগ বাড়িয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বললেন, তারা জড়িত নন এ কাজে।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল। নির্বাচন ঠেকানো ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনে ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে চলছিল জ্বালাও-পোড়াও, বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যা। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটসহ দেশের প্রায় সকল হাসপাতালে আগুনে পোড়া মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়েছিলো।
টানা হরতাল-অবরোধ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনীতির ওপর যেমন আঘাত হানে, তেমনি এতে টান পড়ে মানুষের জীবিকাতেও। নিরুপায় বাধ্য হয়ে নেমে আসেন আগুন সন্ত্রাস উপেক্ষা করে। তবুও বোধোদয় হয়নি, আন্দোলনের নামে দেশের মানুষের ওপর সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে রাজনৈতিক শক্তি।
অন্যদিকে, সামনে এবং পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা নিয়ে চলতে থাকে যাত্রাবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন। অনেকেই নিরাপদ ভেবে বেছে নেয়ার চেষ্টা করেন ট্রেন। কিন্তু সেখানেও নাশকতা করতে ছাড়েনি অবরোধকারীরা।
এসবের মধ্যেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হয়ে যায় নির্বাচন। তারপর বছরখানেক নাশকতার আন্দোলন চালিয়ে রণেভঙ্গ দেয় বিএনপি- জামায়াত জোট।
এবার আরো একটি নির্বাচন সামনে রেখে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরনো দাবিতে আন্দোলনের মাঠে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। চলছে লাগাতার হরতাল অবরোধ কর্মসূচি। অপরদিকে চলছে ২৮টি দল ও বহু স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটের প্রস্তুতি।
এ প্রেক্ষাপটে বুধবার ভোররাতের আঁধারে নাশকতার শিকার রেল। গাজীপুরের ভাওয়াল এলাকায় উপড়ে ফেলা লাইন পার হতে গিয়ে ইঞ্জিনসহ মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের বেশকটি বগি ছিটকে পড়ে পাশের ধান ক্ষেতে। ঘুমের মাঝেই চিরঘুমে চলে গেলেন একজন। আহত অনেকে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হলো নাশকতার উদ্দেশ্যে কেটে ফেলা হয় রেললাইন। প্রকৃত অপরাধীদের বের করতে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবৃতি পাঠান গণমাধ্যমে। আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করেন, কেউ কেউ আন্দোলনরত দলগুলোর ওপর এই নাশকতার দায় চাপানেোর চেষ্টা করছে, যা গভীর চক্রান্তমূলক। তিনি এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
বিএনপি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে শিগিগরই নতুন ধারার আন্দোলনে যাবে তারা। এই অবস্থায় এই বিবৃতিকে কেউ কেউ তুলনা করছেন- ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না- বহুল চর্চিত এই প্রবাদের সঙ্গে।