মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলা নিয়ে বিস্তৃত বিলটি। এতে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা চালায় এই অঞ্চলের হাজার হাজার মৎস্যজীবী। তবে খনন, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে মরতে বসেছে বিলটি। কাঙ্ক্ষিত পানি না থাকায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। যদিও বিলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। বিলের একটি অংশ বয়ে গেছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ এবং উল্লাপাড়া উপজেলার মধ্যে দিয়ে। এছাড়া বিলটির বিস্তৃতি রয়েছে পাবনা ও নাটোর জেলাতেও। প্রতিবছর বৃষ্টিপাত ও বর্ষার পানিতে বছরজুড়েই এই বিলে পানি থাকত। আর দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের ভাণ্ডার ছিলো এই চলনবিল। সারা বছর বিল থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মৎস্যজীবী।
তবে দখল দূষণ আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বিলের ঐতিহ্য। কাঙ্ক্ষিত পানি না থাকায় আগের মতো মিলছে না মাছ। কমছে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন। এতে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ, হারিযে যাচ্ছে বিলের জীববৈচিত্র।
মৎস্যজীবী নজরুল ইসলাম জানান, এক সময় আমরা চলনবিল থেকে অনেক রকম দেশীয় মাছ ধরতাম। এখন মাছ পাওয়া যায় না। বিলের বিভিন্ন জায়গায় সুতি জাল ব্যবহার করে মাছের পোনা ও ডিম ধরছে অনেকেই। এজন্য মাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না।
শুটকি ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, ‘প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বিল থেকে প্রচুর ছোট মাছ পাওয়া যেত। দেশজুড়ে এখানকার সাদু পানির শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে বর্তমানে মাছ কম পাওয়ায় শুটকির উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শুটকির চাতাল।
তাড়াশ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সনাতন দাস বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবী নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে শিকার করছে মাছের ডিম ও পোনা। ফলে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে।
তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহী-নূর রহমান জানান, চলন বিলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিলের খনন, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে অভিযানসহ দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য তৈরিতে একটি প্রকল্প প্রস্তুতের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
মৎস্য অফিসের তথ্য মতে চলনবিল থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৭০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। টাকার অংকে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ কোটি টাকা।