শ্রম আইনের সংশোধনীতে টাইপিং যে ত্রুটি ছিল, তাতে শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তাই রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সই না করে ফেরত পাঠিয়েছেন। শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন হিসেবেই এমনটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন,
নির্বাচনের পর যখন নতুন সংসদ বসবে, তখন সেই ত্রুটি সংশোধন করা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইন যখন সংসদে পাস হয়, তার আগে এটি যখন সংসদে যায়, তখন একটি ত্রুটি ছিল। দেখা গেছে, এটি অন্য কোনো ত্রুটি না, এটি টাইপিংয়ের ত্রুটি। সেটি হচ্ছে, এক জায়গায় শ্রমিকদের সঙ্গে যদি মালিকরা বেআইনি আচরণ করেন, তাহলে তাদের জন্য একটি সাজার কথা আইনের মধ্যে আছে। সেটি একটু মিসপ্লেস হয়ে গিয়েছিল। যেটি ২৯৪ এর এক হওয়ার কথা ছিল, সেটি সেরকম না হয়ে, অন্যরকম হয়েছে।
এই টাইপিং ত্রুটির বিষয়ে তিনি বলেন, আইনটিতে মালিকদের কিছু আচরণ ব্যাখ্যা করে দেয়া আছে। বলা আছে, কোনো মালিক কোনো বেআইনি আচরণ শুরু করলে কিংবা চালিয়ে গেলে, অথবা তা এগিয়ে নেয়ার জন্য কোনো কাজ করলে, তিনি ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই সাজাটি ছিল পাঁচ হাজার টাকা, কিন্তু এটি ২০ হাজার টাকা করেছি। এখানেই ত্রুটিটি হয়ে গেছে। এই ত্রুটি যখন শ্রম মন্ত্রণালয় ধরতে পেরেছে, তখন এটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়। এখন রাষ্ট্রপতি এটিকে ফেরত দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, গত সংসদে অনেকগুলো বিল খুব তাড়াতাড়ি পাস হয়েছিল। সে কারণে এ ভুল পরে ধরা পড়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় যখন এটি রাষ্ট্রপতির কাছে সইয়ের জন্য গেছে, তখন এই ত্রুটির কারণে যে শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়ে যেতে পারে, সেই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। সে জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ভুলের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।
তখন আইন অনুসারে বিলটিতে সই না করে আবার জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছে বলে জনান আনিসুল হক। তিনি বলেন, যেহেতু এটি সংসদে পাস হয়ে গেছে এবং এই জায়গাটুকু সংশোধন করতে হবে। এই সংশোধনের জন্য আইনটি আবার সরকার সংসদে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে এবং বর্তমান সংসদের আর অধিবেশন হবে না, সেহেতু নির্বাচনের পর যে নতুন সংসদ বসবে, সেখানে এটি উপস্থাপন করা হবে এবং ভুল সংশোধন করে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করা হবে।
ত্রুটি থাকার বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, সরকার যখন দেখতে পেল যে শ্রমিকদের যে অধিকার দেয়া হয়েছিল, তাতে কিছু ত্রুটি হয়ে গেছে এবং সেটি শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করবে, এ জন্য সরকার এটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার আইনি বিচারে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন এটি আবার সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
শ্রম আইন রাষ্ট্রপতির ফেরত দেয়ার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকের বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন,
আমি যতদূর জানি যুক্তরাষ্ট্র যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, সেখানে মার্কিন কিছু আইন আছে, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টিও আছে। এটি এমন না যে বাংলাদেশের জন্য করা হয়েছে। এই আইন আগেই ছিল, তার ব্যবহার সম্পর্কে তারা বক্তব্য দিয়েছেন। কাজেই আমাদের শ্রম আইন রাষ্ট্রপতির ফেরত দেয়ার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকের বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই।