হরতাল-অবরোধে বাসে আগুনের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠে আসছে ছাত্রদলের নাম। কখনো সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সরাসরি আবার কখনও অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে আগুন দিচ্ছেন। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতাদের খুশি করতেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ছাত্রদল। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অর্থের কাছে হেরে গেছে ছাত্রদল।
২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ শুরুর আগেই সকাল থেকে হামলা শুরু হয় সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর। সন্ধ্যায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় বাস। পরবর্তীতে এসব ঘটনায় উঠে আসে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নাম।
এরপর থেকেই বিএনপির কর্মসূচি মানেই যানবাহনে আগুন। এ কাজে সবচাইতে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে দলটির সংগঠন ছাত্রদলকে। এমনটাই উঠে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে।
পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে হত্যায় দুইজনকে আটকের পর জানা যায় হামলার পেছনেও ছিলেন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান। আর সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরির জন্য ২৬ অক্টোবর থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের এক নং যুগ্ম আহ্বায়ক শামিম মাহমুদ।
মুগদায় মিডলাইন বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক আল-আমিন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গাজীপুর বিএনপির এক নেতার নির্দেশে অগ্নিসংযোগ করে সে। পরে গাজীপুর থেকে বিএনপি নেতা মিজানুরকে গ্রেফতারের পর জানা যায় অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দেন ছাত্রদলের সূত্রাপুর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি।
৫ নভেম্বর ফুলবাড়িয়ার বাস ডিপোতে এক বাসে অগ্নি সংযোগের প্রস্তুতিকালে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক জামাল হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নভেম্বরের ১৩ তারিখে প্রজাপতি পরিবহনে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মজুমদার।
১৪ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বিআরটিসি বাসে আগুন দেয়ার সময় তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেখানে একজন ছাত্রদল কর্মী ছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুমকে গ্রেফতার করে র্যাব। আর রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি কাাঁচাবাজার এলাকা থেকে ২০ নভেম্বর নাশকতার প্রস্তুতিকালে ছাত্রদলের দুই কর্মীকে হাতেনাতে আটক করে র্যাব।
এমন অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিষেশজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, বাসে আগুন দেয়ার এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে ছাত্রদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মসূচি সফল করতে ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করছে। আর পদ পদবির লোভে ছাত্র নেতারাও বাসে আগুন দিয়ে জনমনে ভীতি তৈরি করার মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে দল হিসেবে তাদের লাভ হলেও ছাত্র সমাজের কাছে ছাত্রদলের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আদর্শের জায়গায় ছাত্ররা তাদের আর বিশ্বাস করতে পারবে না। একটা সময় তারা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে।
আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেছেন, অর্থের কাছে হেরে গেছে ছাত্রদল। আর নেতাদের মদদে ছাত্রদলের আগুন সন্ত্রাসের কারণে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। বিএনপির আন্দোলনে জনগণের কোনো সমর্থন নেই বলেও মত বিশ্লেষকদের।