বিভিন্নভাবে সুবিধা দিয়েও বন্ধ হচ্ছে না খেলাপিদের দৌরাত্ম্য। দেশের ব্যাংকিং খাতে গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকার বেশি। যা আগের ১৮ বছরে ছিল মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আগামী বছর থেকেই খেলাপি ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোকে বাসেল-থ্রি মানতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হবে, এমন মন মাতানো প্রজেক্ট ফাইল, যা খুব সহজেই লুফে নিয়ে ঋণ ছাড় করে ব্যাংকগুলো। তবে বিনিয়োগ শেষেই আসল চেহারা মেলে ধরেন সুযোগ সন্ধানী ইচ্ছেকৃত খেলাপিরা। এমন ঋণ গ্রহণকারীদের ধরতে এবং ভালো ব্যবসায়ীদের ঋণের টাকা পরিশোধের সুযোগ দিতে নানা কায়দায় ফর্মুলা বানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিন্তু প্রত্যাশার খাতায় মিলেছে গুঁড়েবালি। গত দেড় দশকে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ।
১৯৯০ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। ১৮ বছর পর ২০০৯ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার কোটিতে। আর গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের চিত্র। গ্রাফিক চিত্র
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাসেল-থ্রি অনুযায়ী, টানা ৯০ দিন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে খেলাপি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও, তা পরিবর্তন করে ১৮০ দিনের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে দীর্ঘ ৭ থেকে ৮ বছরের এ নিয়ম আরও উৎসাহী করেছে দুষ্টু চক্রকে।
এমন অবস্থায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আর ছাড় নয়, এখন থেকে মানতে হবে আন্তর্জাতিক কাঠামো। এবিষযে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,
যদি দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব থেকে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ব্যাংকিং কোম্পানি আইন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ব্যবহার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কাজেই যেসব আইনী সংস্কার রয়েছে, সেগুলো এখন প্রয়োগ করতে হবে। এই প্রয়োগ যদি সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে করা হয়, তাহলে এই খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব।
লাখো গ্রাহকের আস্থার প্রতীক ব্যাংক খাতে যখন অনিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্য, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুশাসনে জোর দিয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে ১০ শতাংশে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বাস্তবায়ন করা হবে বাসেল-থ্রিও।
বাসেল-থ্রি বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন,
আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেগুলো আমরা হয় তো আগামী বছরের শুরুতেই বাস্তবায়ন করবো। তখন আশা করি খেলাপি ঋণ অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি আমরা বাসেল-থ্রিও বাস্তবায়ন করবো। কাজেই আমরা এই বার্তাটি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। সে অনুসারে, ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং খেলাপি ঋণ যে আর বাড়ানো যাবে না, আমরা বিশ্বাস সেটি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট এবং পরিচালনা পরিষদও অনুধাবন করেছেন।
সবশেষ প্রান্তিকে খেলাপি কিছুটা কমে আসায় শর্ত পূরণ হয়েছে আইএমএফের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।