চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিদর্শনে গেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে দেখা করে উপত্যকাটিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (২৬ নভেম্বর) যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে গাজা পরিদর্শনে গেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম গাজায় কোনো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করলো।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর নেতানিয়াহুর গাজা পরিদর্শনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি সেনাদের উদ্দেশে বলছেন, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ যুদ্ধে আমাদের তিনটি লক্ষ্য: হামাসকে নির্মূল করা, সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং গাজা ইসরাইলের জন্য আর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না, তা নিশ্চিত করা ।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব, বিজয়ের আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, আমাদের সেই শক্তি, সামর্থ্য আছে। আমাদের ইচ্ছা এবং দৃঢ়তা আছে সব লক্ষ্য অর্জনের এবং আমরা অর্জন করবও।’
নেতানিয়াহুর সদর দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, তিনি হামাসের একটি টানেলও পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন- চিফ অফ স্টাফ জাচি ব্রাভারম্যান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হ্যানেগবি, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আভি গিল এবং ডেপুটি আইডিএফ চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল আমির বারাম।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এই হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ৬০০ ইসরাইলি। হামাসের হামলার জবাবে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৪ হাজার ৮৫৪ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬ হাজার ১৫০ জনই শিশু। আহত হয়েছে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এর ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া ৬ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যে এ পর্যন্ত তৃতীয় দফায় বন্দি বিনিময় হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদন মতে, শুক্রবার যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ১৩ জন ইসরাইলি শিশু ও বৃদ্ধকে মুক্তি দেয়। অপরদিকে নারী-শিশুসহ ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৫ নভেম্বর) যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন হামাস নারী-শিশুসহ ১৩ জন ইসরাইলিকে মুক্তি দেয়। যার মধ্যে ছয়জন নারী ও সাতজন শিশুকে। বিপরীতে নারী ও শিশুসহ ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল। যার মধ্যে ছয় জন নারী ও ৩৩ জন শিশু।
এরপর যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন রোববার ( ২৬ নভেম্বর) তৃতীয় দফায় ১৩ ইসরাইলি ও ৪ বিদেশি নাগরিককে মুক্তি দেয় হামাস। আর এর বিনিময়ে ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল।