আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা রেজিস্ট্রি ও সাব রেজিস্ট্রি অফিস। নদী খনন বন্ধে স্থানীয়রা মামলা দায়ের করলেও একপক্ষ তথ্য গোপন করে জমি বিক্রি করেছেন। এদিকে, নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলে সরকারি অন্য কোনো কার্যক্রম চালানো আইনত অপরাধ বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড নবগঙ্গা নদী পুনর্খনন শুরু করে। পরে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নুরনগর পাড়ার জহুরা খাতুনসহ নদী পাড়ের জমির ২৫ জন মালিক মামলা করেন। সে মামলায় আদালত পৌর এলাকার সাতগাড়ি থেকে ঠাকুরপুর পর্যন্ত নদী খনন না করার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
চলমান মামলার আরএস ১৭৫০ ও ১৭৭৬ দাগের শূন্য দশমিক চার পাঁচ একর জমি জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ করে ২০২১ সালের ৩ মার্চ গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা জেলা রেজিস্ট্রি অফিস ও সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে অক্টোবর মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। ঢাকার হাতিরপুলের মার্ক বিল্ডার্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে। এদিকে নদীর জমিতে সরকারি অফিস নির্মাণ কাজ বন্ধ করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা বলেছেন, ছোট বেলা থেকে দেখছি এটা নবগঙ্গা নদী। এখানে আমরা গোসল করেছি ও মাছ ধরেছি। নদীর জায়গায় হঠাৎ করে সরকারি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। নদীর মামলা শেষ হওয়ার পর যে সিদ্ধান্ত আসবে সেভাবেই পরবর্তী কাজ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তার বিপরীত হল। নদীর সুবিধা সবাই ভোগ করতাম। কিন্তু অসাধু লোকজনের কারণে সম্ভব হচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান গরিব রুহানি মাসুম বলেন, ‘নদীর মাঝখানে সাবরেজিস্ট্রি ও রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ শুরু হচ্ছে। নদী খনন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ১২টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে। ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলে সরকারি অন্য কোনো কার্যক্রম চালানো আইনত অপরাধ বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলে সরকারি অন্য কোনো কার্যক্রম চালানো আইনত শুদ্ধ নয়। মামলার রায় আমাদের পক্ষে এলে পুনরায় নদী খনন সম্ভব হবে। রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ চলমান রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা হয়েছে, তবে কোন কারণে অফিস স্থাপন হচ্ছে সেটা বুঝে আসছে না। নদীর গতিপথ রোধ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিক। দ্রুত সময়ে নদীর মাঝ থেকে ভবন নির্মাণ কাজ সরিয়ে অন্যত্র করতে হবে। নয়তো একটি নদী মারা যাবে। প্রধানমন্ত্রী নদী খননে জোর তাগিদ দিচ্ছেন। সে বিষয়ে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূঁইয়া বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রি ও রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মতভেদ আছে। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আর জেলা প্রশাসনের অধীনে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা।