খুলনায় আওয়ামী লীগে এখন পুরোপুরি নির্বাচনী হাওয়া। জেলার ৬টি আসনে নৌকার টিকিট পেতে দলীয় মনোননয়পত্র জমা দিয়েছেন ৫৪ নেতা। বিভিন্ন স্থানে দ্বন্দ্ব থাকলেও আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে একসঙ্গে কাজ করতে চান নেতারা।
এ দিকে নির্বাচনমুখী জাতীয় পার্টিও। দেশের অন্য স্থানের মতো খুলনায়ও দুই বড় রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ভিন্ন। তবে দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রিক না হলেও আন্দোলনে আছে বিএনপিও।
জানা গেছে, নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে আওয়ামী লীগে। ভোটের লড়াইয়ে আগে এখন আওয়ামী লীগে লড়াইটা নৌকার টিকিট পাওয়ার জন্য। জেলার ৬টি আসনে নৌকার টিকিট পাওয়ার জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ৫৪ নেতা। যাদের অনেকেরই আছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, আবার অনেকেই তরুণ-নতুন মুখ। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতারাও অনেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদী।
৬টি আসনের মধ্যে খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান একমাত্র সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল।
অন্যদিকে কয়রা-পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সর্বোচ্চ ১৭ জন। মনোনয়ন পেলে দলকে জয় উপহার দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে আশাবাদী নেতারা। চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আজগর বিশ্বাস তারা জানান, আমি মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। জননেত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের ওপর আস্থা রাখছেন। আমি মনোনয়ন পেলে সবাইকে নিয়ে নৌকার জয় নিশ্চিত করবো।
খুলনা-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. আশরাফুল আলম বলেন, এই আসনে অনেকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে নেত্রী যাকে পছন্দ করবেন, তাকে বিজয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। আমি যদি মনোনয়ন নাও পাই, যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই আমরা সবাই কাজ করবো।
প্রার্থী বেশি হলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করবে বলে জানান খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুজিত অধিকারী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল। এ দলে নেতৃত্ব দিতে পারার মানুষের সংখ্যাও বেশি। তবে এর মধ্যে যাকে বেশি যোগ্য মনে করবেন দলের সভাপতি তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। কেউ যদি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনায় জাতীয় পার্টিও নির্বাচনমুখী। ৬টি আসনে নির্বাচনে মাঠের লড়াইয়ে নামার জন্য ৮ নেতা দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।
খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি অ্যাড. অচিন্ত দাস বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনমুখী দল। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কথায় আমরা আস্থা রেখে নির্বাচনে যাচ্ছি। খুলনার ৬টি আসনেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। অন্তত দুটি আসনে আমরা জয় পাবো।
আওয়ামী লীগের দফতরের তথ্য অনুযায়ী
খুলনা-১ (দাকোপ -বটিয়াঘাটা) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সংরক্ষিত নারী এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, আওয়ামী লীগ নেতা বিনয় কৃষ্ণ রায়, নান্টু রায়, শ্রীমান্ত অধিকারী রাহুল, সনত কুমার বিশ্বাস, সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায় ও চালনা পৌর মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল, রুনু রেজা।
খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী একমাত্র সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল।
খুলনা-৩ (খুলনা মহানগরের খালিশপুর ও দৌলতপুর থানা) আসনে বর্তমান এমপি ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মহানগর সদস্য অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার, নগর আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদক ফারুক হোসেন হিটলু, দৌলতপুর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ বাদল আহমেদ।
খুলনা-৪ (রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, বর্তমান এমপি আব্দুস সালাম মূর্শেদী, স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রিজভী আলম, সাবেক এমপি প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম খালিদীন রশিদী সুকর্ণ, জেলা সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, মো. কামরুজ্জামান জামাল, নগর যুবলীগের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান পলাশ, যুবলীগ নেতা মো. নুর আলম ও সাবেক এডিশনাল আইজিপি মারুফ আহমেদ।
খুলনা-৫ ( ডুমুরিয়া- ফুলতলা) সংসদীয় আসনে বর্তমান এমপি ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা সরোয়ার, জেলা তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অজয় সরকার, জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি মো. মাহাবুব- উল ইসলাম ও মো. আজগর বিশ্বাস তারা।
খুলনা-৬ (কয়রা- পাইকগাছা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা, জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম রাসেল, কয়রা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম মহসিন রেজা, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মনিরুল ইসলাম, পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইকবাল মন্টু, আওয়ামী লীগের জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম, সাবেক পাইকগাছা উপজেলা সভাপতি মো. রাশিদুজ্জামান মোড়ল, জেলা নেতা মো. খাইরুল আলম ও যুবলীগ নেতা এস এম রাজু, এসএম সাইফুল্লাহ আল মামুন।