মাগুরায় শুরু হয়েছে ৫ দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা। প্রতিবছর দুর্গাপূজার কিছুদিন পর জেলায় ব্যাপক উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই পূজা উদযাপিত হয়। এ বছরের পূজা উৎসব শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
কাত্যায়নী উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর লাখো মানুষের ঢল নামে মাগুরায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মিলন ঘটে এ উৎসবে। তবে এ বছর রাজনৈতিক দলের হরতাল অবরোধের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম বলে মনে করছেন আয়োজকরা। তবে মেলায় ভিড় দেখা গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ দিকে পূজা উপলক্ষে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের প্রবেশ পথে দৃষ্টিনন্দন ফটক তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বাড়তি আকর্ষণের জন্য তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোকসজ্জা। পূজা উপলক্ষে জেলা শহরে বিভিন্ন এলাকায় মাসব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাঠের তৈরি উন্নত ফার্নিচার, তৈজসপত্র, কম্বল, শিশুদের খেলনা বিক্রি হয়।
এবারের পূজা উপলক্ষে জেলার ৪ উপজেলায় মোট ৯৪টি মণ্ডপে প্রতিমা স্থাপিত হয়েছে। যার মধ্যে পৌর এলাকায় ১৯টি, সদর উপজেলায় ২৬টি, শ্রীপুরে ১৩টি, মহম্মদপুরে ০৮টি ও শালিখায় ২৮টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে মাগুরা শহরের ১৯টি মণ্ডপ সবচেয়ে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ। শহরের পারনান্দুয়ালী, জামরুলতলা, সাতদোহাপাড়া, নতুন বাজার, বাটিকাডাঙ্গা, শিবরামপুর, নান্দুয়ালীসহ প্রতিটি পূজা মণ্ডপকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট, প্যান্ডেল, তোরণ ও আধুনিক লাইটিংয়ের মধ্যমে সাজানো হয়েছে পূজা মণ্ডপগুলো ।
মাগুরা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব কুণ্ডু বলেন, ধর্মীয় শাস্ত্র মতে, কাত্যায়নী হচ্ছে দেবী দুর্গার আরেক নাম। দাপর যুগে যমুনা নদীর তীরে দেবী দুর্গার মাধ্যমে কৃষ্ণ আরাধনা করতো যমুনা পাড়ের মানুষ। সেই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অনুসরণ করে কাত্যায়নী দেবীর মূর্তি স্থাপন করে প্রতিবছর পাঁচদিন ধরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মাগুরার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ পূজা পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, ৫০ বছর আগে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালীতে সতীশ মাঝি তার বাড়িতে প্রথম এই পূজা শুরু করেন। তারপর থেকে এ পূজা মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়ে আসছে। কাত্যায়নী পূজার প্রতিমা থেকে শুরু করে সবকিছুই দুর্গাপূজার আদলে করা হয়।
মাগুরা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, মাগুরা ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজার পরিচিত গোটা দেশজুড়ে। এই পূজা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি বলেন, তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল অবরোধের কথা মাথায় রেখে বিজিবি, ডিবি, গোয়েন্দা নজর দারি বাড়ানো হয়েছে। আশা করি পূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।