বাড়তি নজরদারির কারণে ওভার ইনভয়েসিং বা আমদানি করা পণ্যের অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে টাকা পাচার কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। তা ছাড়া হুন্ডি নিয়ন্ত্রণেও চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এদিকে ক্যাশ ডলার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধভাবে টাকা পাচারের অন্যতম পথ ‘ট্রেড বেসড মানি লন্ডারিং’। ব্যবসার ছদ্মবেশে এ মাধ্যমকে অত্যন্ত নিরাপদভাবে ব্যবহার করে থাকে অপরাধ চক্র। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে অতিরিক্ত আমদানি মূল দেখিয়ে সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি। তার আগের দুই অর্থবছরে ছিল ৭ হাজারের বেশি।
ধারাবাহিকতায় শেষ দুই অর্থবছর ব্যবসার আড়ালে কত টাকা পাচার হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে বছরখানেক ধরে ডলার সংকট বাদ সেধেছে সে পন্থায়। আমদানি-রফতানিতে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য যাচাই করতে ব্যাংকগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে প্রায় ৯০ ভাগ অর্থ পাচার বন্ধ সম্ভব হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। আর হুন্ডি নিয়ন্ত্রণেও সতর্ক বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন,
আমি বিগত ১৫ থেকে ১৬ মাস ধরে যে কাজ করছি, তাতে ওভার ইনভয়েসিং মোটামুটি ৯০ শতাংশ কমিয়ে ফেলেছি। ১০০ ভাগ তো কমানো যাবে না। কিন্তু ৯০ শতাংশ কমিয়ে ফেলেছি। কাজেই আমি আপনাকে বলতে পারি যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার মোটামুটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যেটি হচ্ছে, সেটি হলো হুন্ডির মাধ্যমে কিছু টাকাপয়সা যাওয়া-আসা করছে। তাই হুন্ডি কীভাবে বন্ধ করা যায়, আমরা সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
রফতানি আয়ের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের পণ্য রফতানির মূল গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ এবং আমেরিকা। সেখানে পণ্য আমদানি অনেক কমে গেছে। তা সত্ত্বেও সেখানে আমাদের বিগত ৪ মাসের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ শতাংশের বেশি রয়েছে। তা ছাড়া আমরা আমাদের আমদানিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি এবং সেটি অনেকটাই কমে এসেছে। এখন আমাদের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে।’
প্রবাসী আয়ের প্রবাহ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এর বাইরে রেমিট্যান্স যা আসছে, তা আগের বছরের একই সময়ের প্রায় সমান। চলতি বছর রেমিট্যান্সের হার মাত্র ১ শতাংশ কম রয়েছে। তবে আমরা আশা করি যে এই মাস থেকে এটি বেড়ে যাবে। তার এটি ক্রমেই বাড়তে থাকবে।’
ডলার রেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে সব ব্যাংকের কথা হয়েছে। তারা রাজি হয়েছে যে তারা প্রতিযোগিতায় যাবে না এবং তারা ন্যায্য দামে থাকবে। তা ছাড়া এখানে সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোও রাজি হয়েছে যে তারা নিজেরা তাদের নিজস্ব সামর্থ্য হিসেবে প্রণোদনা দেবে। তাহলে আমার মনে হয়, আমরা যদি সব কটি একসঙ্গে যোগ করি, তাহলে এখন যে দাম, তা মোটামুটি বাজার দরের সমান। তা ছাড়া আমি মনে করি না ডলারের বিপরীতে টাকার মান খুব বেশি পড়ে যাবে। উল্টো ভবিষ্যতে এ মান বাড়তে পারে।’
এদিকে দেশের বাইরে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে যেতে বছরে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়। যার প্রভাবে অস্থির থাকে নগদ ডলারের বাজার। তাই চাপ কমাতে ডলার আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
তিনি বলেন,
সংকট যেন না থাকে, মানুষ যেন ক্যাশ পেতে পারেন, তাই আমরা একটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ডলার আনবে। আরও যদি দু-একটি ব্যাংক আনতে চায়, তাহলে আমরা তাদের অনুমতি দেব। সুতরাং, ক্যাশ ডলারের সংকট যেন না হয়। আর আমরা তো এরই মধ্যে টাকা পে কার্ড করেছি। আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা এটির সঙ্গে রুপি অন্তর্ভুক্ত করতে পারব। ফলে কেউ যখন ভারত যাবে, তখন আর তাকে ক্যাশ ডলার নিয়ে যেতে হবে না। টাকা পে কার্ড নিয়ে ব্যবহারকারী তার যে ১২ হাজার ডলারের কোটা রয়েছে, সেটি সেখানে খরচ করতে পারবেন।
এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তারল্য সংকট কাটাতে অর্থ সহায়তা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনিটরিংয়ে জোর দেয়ার কথাও জানান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।