আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত বলে দাবি করছেন অথচ কোনো জোটে ভিড়ে একটি আসন হলেই খুশি, এমন অনেক রাজনৈতিক দল জেগে উঠে নির্বাচন এলে। হাঁকডাক দিয়ে নিজেরাই ঘোষণা দিচ্ছেন নতুন জোটের।
কেউ আবার বড় দলের সঙ্গে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পেরেই খুশি। অথচ সবাই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। পাঁচ বছর কোনো খবর না থাকলেও নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন এসব দলের নেতারা। বড় দলগুলোও নিজেদের শক্তিমত্তা প্রমাণে ভোটের কদিন পাশে রাখেন তাদের, তারপর খুব একটা দেখা যায় না এ সখ্যতা তাদের মধ্যেও।
সম্প্রতি সময় সংবাদের বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বলে প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচন এলে হঠাৎ করেই কিছু নেতা কিংবা দল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব নেতার হয়তো এক সময় খুব বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল। কিন্তু পরে নাম সর্বস্ব কোনো দলের নেতা কিংবা প্রধান নেতা হয়ে আছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মালিকানা পেয়ে থাকায় বনে যান ছোট দলের বড় নেতা।
ভোট এলেই কদর বাড়ে তাদের। অর্থাৎ নির্বাচনের মাস কয়েক আগে থেকে এরা পাদপ্রদীপের কেন্দ্রে চলে আসেন।
গণমাধ্যমগুলোও তাদের নিয়ে বেশ মাতামাতি শুরু হয়। আবার নির্বাচন শেষ হলে তারা চলে যায় আড়ালে।
গত প্রায় সবকটি জাতীয় নির্বাচনের আগে মোটামুটি একই চিত্র দেখা গেছে এসব দলগুলো নিয়ে। তবে বিভিন্ন সময় বড় দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে থাকা ব্যক্তি সর্বস্ব দলগুলো আলাদা। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত চোখ রাখলে দেখা যায়। জোট-মহাজোটের হিসেবে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নাম থাকলেও পরে তারা হারিয়ে যায় হিসেবের খাতা থেকে। রাজনৈতিক সমিকরণটা মেলাতে হয় নৌকা, ধানের শীষ আর লাঙ্গলেই।
চার সাড়ে চার বছর তাদের তেমন জনসম্পৃক্ততা না থকলেও হঠাৎ করেই ৩০০ আসনের ধোয়াঁ তুলছেন এসব নেতারা।
গণফন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, চেষ্টা করছি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে। আমাদের তালিকা করা আছে। যদি আওয়ামী লীগ আমাদের জোটে নেয়, তাহলে আমরা জোটে যাবো।
আদতে নিজেদের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা থাকলেও জোটের দর কাষাকষিতে নিজেদের এগিয়ে রাখতে এখন ভোটের মাঠে নামছেন তারা।
গণতন্ত্রী পার্টির নেতা ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের দল ভূইফোর পার্টি না এটা কিংস পার্টিও না, এটা একটা ঐতিহ্যবাহী পার্টি। গত তিনটি নির্বাচনে আমরা কোনো আসন পাইনি। অবশ্যই আমরা শরিকদল থেকে সিট (আসন) চাই।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু বলেন, মানুষ ভোগবিমুখ হয়ে গেছে। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি, মানুষকে নির্বাচন কেন্দ্রে আনার জন্য। ক্ষমতায় যাওয়ার আসা আমরা করছি না।
যদিও নিজেদের জোটের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিতে বড় দলগুলোও এই সময়ে দলে ভেড়ায় এমন দলগুলোকে।
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নের আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। গত ১ নভেম্বর থেকে এবারের নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। সেঅনুসারে ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।