ইসরাইলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের একতরফা সমর্থনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আরব ও মুসলিম ভোটারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দিন দিন সমর্থন কমছে জো বাইডেনের। এটি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত নির্বাচনে আরব-আমেরিকানদের ৫৯ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন বাইডেন। সেই সমর্থনের হার এখন নেমে এসেছে ১৭ শতাংশে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ হাজারের বেশি শিশু। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতের প্রথম থেকেই ইসরাইলকে সমর্থনের পাশাপাশি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।
বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলি হামলাকে ন্যায়সঙ্গত আত্মরক্ষা বলেই ক্ষান্ত হয়নি, সে কাজে অর্থ, সৈন্য ও অস্ত্র-বারুদ দিয়েও সমর্থন জোগাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেসি নাউয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে প্রতিদিনই বিশ্বের নানাপ্রান্তে বিক্ষোভ হচ্ছে। ব্যতিক্রম নয় যুক্তরাষ্ট্রও। স্থানীয় সময় শনিবার (৪ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসের সামনে স্মরণকালের বিশাল সমাবেশে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। দেশটিতে বসবাসরত ইহুদি কমিউনিটির লোকজনও বিক্ষোভে অংশ নেন।
ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসের সামনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। ইসরাইলকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা না করার আহ্বান জানিয়ে যুদ্ধবিরতির দাবি জানান তারা।
হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু করে প্রতিটি রাস্তায় জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। এতে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। হামলা বন্ধের পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য পদক্ষেপ না নিলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ভোট না দেয়ারও হুমকি দেন আরব-আমেরিকান নেতারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে উদ্দেশ করে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন,
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য পদক্ষেপ না নিলে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে মিশিগান, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও ওহিওতে তাকে (বাইডেন) কোনো ভোট দেয়া হবে না।
বিগত ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাত ‘দোদুল্যমান রাজ্যে’ মুসলিম ভোট বাইডেনের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। গাজায় নির্বিচার হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলের প্রতি বাইডেনের নিঃশর্ত সমর্থন আরব মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের প্রতি আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সমর্থন ছিল ৫৯ শতাংশ। সবশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, আরব ও মুসলিমদের মধ্যে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে আরব-আমেরিকান ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট জেমস জোগবি বলেন, গাজার বাসিন্দাদের সঙ্গে ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। অথচ বাইডেন প্রশাসন এদিকে চোখ বন্ধ করে রাখছে। এগুলো অবশ্যই আগামী নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতিতে ইসরাইলকে রাজি করানোর পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন নির্বাচনে বাইডেনের পক্ষে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুসলিম সদস্যরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুসলিম সদস্যদের জোট দ্য ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল ‘২০২৩ যুদ্ধবিরতি আল্টিমেটাম’ নামে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে।
ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিলে মিশিগান, ওহিও ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা রয়েছেন। এ অঙ্গরাজ্যগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
বাইডেনের উদ্দেশে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আপনার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন, অর্থ ও সামরিক সহায়তা ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনদের ওপর পরিচালিত সহিংসতাকে স্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং একই সঙ্গে, গত নির্বাচনে যেসব মার্কিন মুসলিম ভোটার আপনার পক্ষে ছিলেন—আপনার প্রতি তাদের আস্থা দিন দিন কমে আসছে।’
আরব ও মুসলিম আমেরিকান নেতারা বাইডেনের ইসরাইল-তোষণ নীতিতে বেশ ক্ষুব্ধ। এছাড়া বাইডেনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় ইসরাইলকে মদদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন চলতি কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মিশিগানের রশিদা তালিব।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি সমর্থন করুন, অন্যথায় ২০২৪ সালে আমাদের ভোট আপনি পাবেন না। একই কথা বলেছেন মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের অপর মুসলিম সদস্য ইলহান ওমরও।’