ডলার সংকটের আগুনে ঘি ঢালছে অবৈধ অর্থ। দুর্নীতিবাজরা বেশি বেশি টাকা সংরক্ষণ ও পাচার করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এ অবস্থায় বাজার দরে ডলার বেচাকেনা হওয়া যৌক্তিক বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
মার্কিন ডলারের নিয়ন্ত্রক এক দেশ হলেও, এ মুদ্রাটি মাতিয়ে রেখেছে পুরো বিশ্ব। এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমানে ইসরাইল-হামাস সংঘাত, এ সবেরই প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এটি আরও নাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের শীর্ষ বিনিময় মুদ্রা ডলারকে।
বিগত দেড় বছর ধরে মার্কিন মুদ্রার সরবরাহ নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ পেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়ছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আর প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনযাত্রায়ও।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,
ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের নানা রকমের জটিলতা রয়েছে। সময়মতো এলসি (ঋণপত্র) খোলা যাচ্ছে না। এজন্য ১৫ থেকে ২০ দিন বা ক্ষেত্রবিশেষে একমাসও লেগে যাচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা সময়মতো চালান সরবরাহ করতে পারছেন না। কারণ এলসি হতে হতে লিড টাইম কমে যাচ্ছে, ফলে নির্ধারিত সময়ে চালান শিপমেন্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। কারণ নির্ধারিত সময়ে চালান না দিতে পারলে ক্রেতাকে ছাড় দিতে হয় বা এয়ারশিপমেন্ট দিতে হয়। আর সে ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ টাকা সেখানেই শেষ।
পরিস্থিতি যখন এমনই বেসামাল, তখন কীভাবে তা সামাল দেয়া যায়, তার সমাধানে কী প্রয়োজন বলে মনে করছে ব্যাংকগুলো? এ প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক এশিয়ার ভিপি ও সিটিএসইউ প্রধান হাসান এ সাইমুন বলেন, ‘আমরা যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আরও বেশি আনতে চাই, তাহলে ব্যাংকিং চ্যানেল এবং নন-ব্যাংকিং চ্যানেলের মূল্যগত পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। দরকার হলে প্রণোদনা আরও বাড়াতে হবে। প্রণোদনা বাড়িয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনাকে আরও বেশি উৎসাহিত করতে হবে।’
প্রণোদনা বাড়িয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়লেও শঙ্কা হুন্ডির তৎপরতা নিয়ে। এর সঙ্গে অবৈধ আয় করা দুর্নীতিবাজ শকুনদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আকড়ে ধরছে ডলার সরবরাহে। অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ এমনটাই মনে করেন।
তিনি বলেন,
দুর্নীতি কমাতে হবে। যারা দুর্নীতি করেন, তাদের হাতে প্রচুর নগদ টাকা রয়েছে। তারা এই নগদ টাকা অনেক সময়ই হুন্ডিতে ব্যবহার করেন। আবার অনেক সময় সেগুলো পাচার করেন। তিনি ডলার ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছেন, না ১৫০ টাকা দিয়ে কিনেছেন, এটি নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ তার কাছে প্রচুর অবৈধ মুদ্রা রয়েছে। কাজেই আমাদের এই জায়গাটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, করপোরেট সুশাসনে ঘাটতি, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ঋণের সুদের হার দীর্ঘ সময় কমিয়ে রাখায় দেশের অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে।