নির্বাচনের আগে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে আপাতত কোনো চুক্তি হচ্ছে না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো এত বড় চুক্তি করার আগে রয়ে সয়ে এগোতে চায় সরকার।
সমুদ্রসীমায় সম্ভাবনার হাতছানি থাকলেও দেশের জ্বালানি খাত চলছে বহুমুখী অনিশ্চয়তা সঙ্গী করে। এমন বাস্তবতায় আশা জাগিয়েছিল গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলের প্রস্তাব।
এ নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে চলে দেনদরবারও। নীতিনির্ধারণী মহল থেকে চলতি বছরই চুক্তির ইঙ্গিতও মিলছিল। এর মধ্যেই আবার গভীর সমুদ্রে আগ্রহ দেখিয়েছে আরেক মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন।
নানামুখী তৎপরতায় ভাবা হচ্ছিল, সরকারের বর্তমান মেয়াদেই বড় কোনো অগ্রগতি হতে পারে। তবে সবশেষ পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, নির্বাচনের আগে তেমন কিছু হচ্ছে না। এত বড় ধরনের চুক্তি বাংলাদেশের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হওয়ায়, সরকার রয়েসয়ে এগোতে চায়। অন্যদিকে সিদ্ধান্তে যেতে জরিপের ফলাফলের অপেক্ষায় মার্কিন কোম্পানিও।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সময় সংবাদকে বলেন,
আমরা চুক্তির খসড়া নিয়ে কথা বলছি। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও সময় লাগবে। তারা জরিপ করতে চাচ্ছে। আর আমাদেরও জরিপ শেষ হয়নি, কিছু কিছু জায়গা এখনো বাকি রয়েছে। সেহেতু দুই পক্ষের একই সময়ে জরিপ করার কোনো মানে হয় না।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্পূর্ণ জরিপ শেষ হতে পারে, এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তাই সেখান থেকেও আমরা একটি ফলাফল পাবো, তখন আমরা ওপেন টেন্ডারে যেতে পারি। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোও সেটিতে অংশ নিতে পারবেন। কেননা, তখন তো সবার কাছে জরিপের ফলাফলও থাকবে।’
সার্বিক বিষয়ে খুঁটিনাটি যাচাইয়ে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পথেও হাঁটছে সরকার। সব মিলিয়ে সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সিদ্ধান্তের ভার যাচ্ছে ভোটের পর নতুন সরকারের ওপর।
নসরুল হামিদ আরও বলেন,
আলোচনার মাধ্যমে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেজন্য আমরা একটি বিশেষজ্ঞ দল নিয়োগ দিচ্ছি। মূলত একটি আইনি পরামর্শ দল নিয়োগের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা রয়েছি। এগুলো নির্ভর করে আগামী নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, সেই সরকারের ওপর।
তবে চুক্তি করার আগে জরিপ সম্পন্ন করাকে কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক প্রক্রিয়া বলেই মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।
তিনি বলেন,
জরিপের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা হবে, এটিই হচ্ছে একটি মানসম্মত চর্চা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই সঠিক চর্চা কমপক্ষে ৮ বছর আগে শুরু করা উচিত ছিল। কমপক্ষে ১০ বছর আগেও তা শুরু করা যেতো। কিন্তু এটি আরও ৫ বছর আগে নিলে অনেক ভালো হতো, এতে আমরা অদূর ভবিষ্যতে এই গ্যাস পেতাম।
প্রসঙ্ত, প্রায় এক যুগ আগে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং এক দশক আগে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিতর্ক শেষ করে বাংরাদেশ। তবে এখনও সে ফসল ঘরে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। সব কিছু ঠিকঠাক মতো এগোলেও সমুদ্রের তেল-গ্যাস পেতে সময় লাগবে আরও ৮ থেকে ১০ বছর।