প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছে সরকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা যেন সমান অধিকার পায় সেই ব্যবস্থাও করেছে সরকার। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে জয়িতা ফাউন্ডেশনের ধানমন্ডিস্থ নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন শেষে গণভবন থেকে নারী উদ্যোক্তা এবং সারাদেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীদের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
জয়িতা টাওয়ারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও এখন থেকে সুযোগ পাবেন তাদের ব্যবসা প্রসারের। ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে; আইন প্রণয়নের কারণে এখন এসিড ছোঁড়া বন্ধ হয়েছে। নারীর ওপর সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। নারীদের জন্য কী কী করণীয় রয়েছে তা নিয়ে কাজ করতে ৪৩টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। নারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার বলেও জানান তিনি।
সমাজে যারা নিজেরা উদ্যোক্তা, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন, কর্মক্ষেত্রে নিজ দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন এবং রাজনীতি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান; যারা এ গণভবনে এসেছেন আপনাদের সবাইকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে কেন নারীরা পিছিয়ে থাকবে, নারী জাগরণের নেত্রী বেগম রোকেয়া তো আমাদের প্রথম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নারীদের শিক্ষার জন্য বেগম রোকেয়া যে অবদান রেখে গেছেন তার তুলনা হয় না। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটা সময় এদেশের নারীরা জজ-ব্যারিস্টার হবেন, সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। আজ দেশের নারীরা সব জায়গাতে তাদের আপন মহিমায় স্থান করে নিতে পেরেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু মাথা খুটলে আর আকুতি জানালে হবে না, নিজেদের গুণেই নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেই কারও মুখাপেক্ষি হয়ে আর থাকতে হবে না। একটা সময় রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলাম, নারী নাম না থাকলে সেই ফাইল আমি কার্যকর করব না। কেন না, রাষ্ট্রপতির ফাইল তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসে। আবার নারী এসপি করার সিদ্ধান্তের সময় অনেকেই ইতস্তত করেছিলেন। কিন্তু এখন এটা প্রমাণিত তারাও পারে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে। নারীকে পর্দার আড়ালে বন্দি রেখে, কাজ করতে না দিয়ে ইসলাম রক্ষা হয় কিভাবে? সবক্ষেত্রে এখন নারীদের সমান অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
এ সময় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের সাথে জোট বেধে নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারানো নারী নেত্রী আইভি রহমানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের নৃশংস অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে আমাদের নারী নেত্রী ও কর্মীদের। সমাবেশে গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যাও করা হয়।
তিনি বলেন, জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনে সবসময় ছায়ার মত ছিলেন আমার মা ‘বঙ্গমাতা’। একজন নারী পাশে থাকলে পুরুষের বিজয় যে তরান্বিত হয় তা প্রমাণ করে গেছেন বঙ্গমাতা। একটা সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে বিচারও চাওয়া যেত না। বঙ্গমাতা নিজে দাঁড়িয়ে গণবিয়ে দিতেন। আর তাদের ঠিকানা দেয়া হত ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের। সেই সব নারীদের বাবার নামের জায়গাতে নিজের নাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। পরীক্ষার পাসের হারেও দেখা যাচ্ছে মেয়েরা এগিয়ে। পৃথিবীতে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির কথা বলা হয়, আমাদের দেশে তো এটার উল্টো ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ এখন সবক্ষেত্রেই মেয়েরা এগিয়ে আছে। জয়িতার মাধ্যমে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে বলেন তিনি।
দেশে যাতে কোনোভাবেই খাদ্যের অভাব দেখা না দেয় সেই ব্যবস্থা এবং উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। আন্দোলন করে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হবে না। অধিকার নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে জ্ঞান ও কর্মদক্ষতার মধ্যে দিয়েই অর্জন করতে হবে আমাদের।
পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধের দামামা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আমরা যুদ্ধ চাই না। নারী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়; মা হিসেবে বিশ্ব নেতাদের কাছে অনুরোধ করব; আপনারা এ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা আর যুদ্ধ বন্ধ করুন। নারী-শিশুদের মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন আপনারা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি নারীর ক্ষমতায়ানও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে; এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেই চেষ্টা থাকতে হবে সবারে মধ্যে জানান শেখ হাসিনা। নারীরা এখন গ্রামে বসেও যেমন কাজ করতে পারবে এবং উপার্জনও করতে পারবে। সবার তো ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই এখন দেশে-বিদেশে অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এর আগে সকাল ১০টায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণলায়ের আওতাধীন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ধানমন্ডিস্থ নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।
নারী উদ্যোক্তাদের ঠিকানা জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন, জয়িতা টাওয়ারে স্থাপিত জামদানি গ্যালারি ও জয়িতা মার্কেট প্লেস উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জয়িতা ব্র্যান্ডের আওতায় নানামুখী ব্যবসার উদ্যোগে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে অত্যাধুনিক ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সংবলিত জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এ টাওয়ারে ইউনিভার্সেল এক্সেসিবিলিটিসহ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সাপ্লাই চেইন এবং সেবা বিপণনের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।