মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥
সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলায় ২ এতিম শিশুর পুকুরের পানিতে পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সরকারি শিশু পরিবারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলায় ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে মর্মে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেজবুকে বিভিণœ ব্যক্তিবর্গ নানা স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলো সদর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার নজরুল ইসলাম ও সমাজ সেবা অফিসের রেজিস্ট্রার মোঃ মজিবুর রহমান। তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা গেছে। আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন তারা। এদিকে দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঁচানোর জন্য প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মৃত শিশুদের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। কেননা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার নজরুল ইসলাম সম্প্রতি শরীয়তপুর শিশু পরিবারে উপতত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে স্থানীয় লোকজনের রোষানলে পড়েছিলেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
বৃস্পতিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম দায়িত্বে অবহেলায় অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ মিয়ার কক্ষে বসে তাকে বাঁচানোর জন্য নানা ফন্দিফিকির চালাচ্ছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়ার কোন দোষ নেই। তদন্তের আগেই কিভাবে জানতে পারলেন তার দোষ নেই-এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের অন্যসব শিক্ষার্থীরা স্কুলে গেলেও শিশু শিক্ষার্থী সোহেল বয়াতি ও সাদিকুল ইসলামকে স্কুলে না পাঠিয়ে মাঠে ছাগল চড়ানোর নির্দেশ দেন উপতত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ ও সংশ্লিষ্টরা। ছাগল চড়ানো শেষে পুকুরে গোছল করতে গিয়ে ওই দুই শিশু শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়। দুপুর ১২ টায় তাদেরকে পুকুর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শিশুর স্বজনরা জানান, নিজেরা বাচ্চাদের পড়াশুনা করাতে অক্ষম বিধায় কোন উপায় না দেখে শিশুদের সরকারিভাবে পড়ানোর জন্য শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারে দিয়েছিলাম। এখন তারা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। আমাদের ভবিষ্যতের সকল আশা ভরসা শেষ হয়ে গেল। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার দাবি করছি।
এদিকে শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারে নিম্মাননের খাবার সরবরাহ, মরা মুরগির মাংস, পঁচা চাল, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিক্ষক ও শিশু পরিবারে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপস্থিতি থাকাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিশু পরিবারের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মোঃ হাসেম সরদার, সামছু মাল, অলিল সরদার, আজিজুল বেপারীসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, আমরা স্থানীয় লোক, আমরা সবসময় এখানে থাকি। শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্ববধায়কসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অফিস করেন না। এখানে ভর্তি হওয়া এতিম শিশুদের তারা যতœ না নিয়ে উল্টো শিশুদের দিয়ে ছাগল চড়ানো হয়। শিশুদেরকে নি¤œমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। এতিমদের জন্য সরকারের দেয়া বরাদ্দের টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়া বলেন, আমার দায়িত্বে কোন অবহেলা নেই। যেই দুই শিশু মারা গেছে তারা অনেকটা প্রতিবন্ধী। তাদের পুকুরের পানি থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমরা আর কি করবো।