ইসরাইল-হামাস সংঘাতের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকটের শঙ্কাও।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইল ও গাজার মধ্যকার চলমান পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে, এমন উদ্বেগের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৫০ ডলার বেড়ে উঠে গেছে ৮৭ দশমিক শূন্য ৫ ডলারে। এদিন সকালে ইউএস বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ২ দশমিক ৭০ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলারে।
যদিও ইসরাইল ও ফিলিস্তিন জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী অঞ্চল নয়, তা সত্ত্বেও এই দুই দেশের মধ্যে দেখা দেয়া সংঘাত জ্বালানির বিশ্ববাজারকে প্রভাবিত করছে। কারণ বিশ্বের মোট জ্বালানি তেলের প্রায় এক তৃতীয়াংশই সরবরাহ হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
হামাসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের ইসরাইলে হামলার এই পদক্ষেপে ইরানের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ইরান। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোববার (৮ অক্টোবর) নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান এই হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কিন্তু অপরদিকে আবার হামাসের এই হামালায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সমর্থন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশ্লেষক সাউল কাভোনিক বিবিসিকে বলেছেন,
মূলত ইসরাইল ও গাজার মধ্যকার এই সংঘাতে ইরান ও সৌদি আরবের মতো প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো জড়িয়ে যেতে পারে, এমন উদ্বেগেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যদি হামাসের হামলায় সহায়তার অভিযোগে ইরানও সংঘাতের মুখে পড়ে যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে মোট তেল সরবরাহের ৩ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এছাড়া যদি সংঘাত আরও বাড়ে এবং তাতে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্য রুট স্ট্রেইট অব হরমুজে প্রভাব ফেলে, তাহলে বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ আটকে যেতে পারে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের প্রধান পণ্য অর্থনীতিবিদ ক্যারোলিন বেইন বিবিসি’র টুডে প্রোগ্রামে বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইরান এই বছর তেল উৎপাদন বাড়িয়েছে। তাছাড়া বছরের শেষ তিন মাসে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। এতে দাম আরও বাড়বে।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। গত বছরের জুনে এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১২০ ডলারের ওপরে উঠে যায়। যদিও পরে তা পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে। ফলে চলতি বছরের মে মাসে তা কমে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের কাছাকাছি নামে। কিন্তু ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণায় আবারও উর্ধ্বমুখী হতে থাকে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম। যার কারণে এক পর্যায়ে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ৯৫ ডলারের কাছাকাছি উঠে যায়।
উল্লেখ্য, বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো ‘দ্য অরগানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম কান্ট্রিস’ বা ওপেক নামে পরিচিত। আবার ওপেকের বাইরে অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশ ও ওপেকের সদস্যদের একত্রে ওপেক প্লাস নামে অভিহিত করা হয়। সেপ্টেম্বরে ওপেকের সদস্য সৌদি আরব ও রাশিয়া জানিয়েছিল, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সম্মিলিতভাবে দৈনিক ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন কমানো হবে।