মাধ্যমিক স্তরের ক্লাসে থাকছে না রোল নম্বর। ষষ্ঠ শ্রেণিতেই হবে বোর্ড রেজিস্ট্রেশন। সেটি দিয়েই শনাক্ত করা হবে শিক্ষার্থীকে। বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলছে, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগিতা কমবে। তবে রোল নম্বর না থাকলেও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে আলাদা গ্রুপ তৈরির পরামর্শ শিক্ষা গবেষকদের।
বর্তমানে নবম শ্রেণিতে শিক্ষা বোর্ডে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা এসএসসিতে বসে শিক্ষার্থীরা। তবে ২০২৪ সালে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরই করতে হবে বোর্ড রেজিস্ট্রেশন।
বোর্ড বলছে, রেজিস্ট্রেশনের ফলে কত শিক্ষার্থী কোন শ্রেণিতে রয়েছে, তার একটি সুস্পষ্ট চিত্র বোর্ডের কাছে থাকবে। আর রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীর তথ্য একটি অ্যাপে যুক্ত করা হবে। অ্যাপ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার তথ্য রেকর্ড রাখা হবে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার সুযোগ থাকায় প্রয়োজন হবে না রোল নম্বর।
এ ছাড়া আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন থাকা পাবিলক পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থী ও বোর্ড কর্তৃপক্ষের চাপ কমবে। আর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রচিলত রোল নম্বর না থাকলে কমবে অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সময় সংবাদকে বলেন,
বিদ্যমান নিয়মে কোনো শিক্ষার্থী প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলে তাদের রোল নম্বর ১, ২, ৩ করে ধারাবাহিকভাবে হয়। কিন্তু বর্তমান আমাদের নতুন কারিকুলামে ওই রকম প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় থাকছে না। আর যেহেতু এই নিয়ম থাকবে না, তাই শিক্ষার্থীর জন্য একটা স্টুডেন্ট আইডি প্রয়োজন হবে। সে জন্য আমাদের একটা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দরকার। ডেটাবেজ তৈরি হচ্ছে। ডেটাবেজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে তার পারফরম্যান্স সংরক্ষণ করা থাকবে।
তিনি বলেন, পড়াশোনা হবে ইন্টারেকটিভ। সবার জন্য একই মানের হবে। নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন না, মূল্যায়ন হবে পারফরম্যান্সের ওপর। এখানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় থাকছে না। কাজেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না।
আর শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, রোল নম্বর থাকা না-থাকা কোনো বিষয় নয়, তবে কোন শিক্ষার্থীর কোথায় ঘাটতি তা চিহ্নিত করতে শিক্ষার্থীদের একক না হলেও গ্রুপভিত্তিক ক্যাটাগরি থাকা জরুরি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন,
আমরা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের একটি ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি অথবা দলীয়ভাবে একটি মূল্যায়নের পর্যায়ে ফেলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করতে পারি। কিন্তু বিষয় যেটি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে একধরনের প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। এটাকে আমরা বলি পজিটিভ ইনসেনটিভ। এই পজিটিভ ইনসেনটিভকে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলে সেটি খারাপ বলে যে দুর্নাম করা হচ্ছে, আমি মনে করি এটি বিশেষজ্ঞদের অজ্ঞতা।
আর আগামী বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালুর আগেই সরাসরি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরামর্শ তাদের।