চীনা অর্থায়নে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগে ভারতের অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক খ্যাতনামা সাংবাদিক প্রবীর পুরকায়স্থকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে অমিত চক্রবর্তী নামে সংবাদমাধ্যমটির এক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকেও। গ্রেফতারের পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দিনভর অনলাইন সাংবাদমাধ্যম নিউজক্লিকের অফিসে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। তল্লাশি চালানো হয় সংবাদমাধ্যমটিতে কর্মরত সাংবাদিকদের বাড়িতেও। অভিযানে মোট ৪৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এদিন কয়েকজন সাংবাদিকের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকার ‘সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধের চেষ্টা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস নিউজক্লিকের অর্থায়ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, চীনের পক্ষে প্রচারণার জন্য ফান্ডিং তথা অর্থ পাচ্ছে সংবাদমাধ্যমটি। এরপরই শুরু হয় অভিযান। মঙ্গলবার সকাল থেকে দিল্লি এনসিআরের পাশাপাশি মুম্বাইয়ের অন্তত ৩০টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ।
খবরে বলা হয়েছে, এদিন নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় নিউজ পোর্টালের প্রশাসনিক প্রধান অমিত চক্রবর্তীকেও।
তাদেরকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন ও বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরপর বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে তাদেরকে নিম্ন আদালতের বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। তাদেরকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিকে নিউজক্লিকের অফিসে তল্লাশি অভিযান এর প্রধান সম্পাদকের গ্রেফতার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই এই তল্লাশি অভিযানকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিহিত করে এর সমালোচনা করছেন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই তল্লাশি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া। সাংবাদিকরা এর বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ডিফেন্ডমিডিয়াফ্রিডম’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতেও শুরু করেছেন। এক বিবৃতিতে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া বলেছে, নিউজক্লিক-এর সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক ও লেখকদের বাড়িতে এই তল্লাশি খুবই উদ্বেগের। তারা এই বিষয়টির উপর নজর রাখছে।
প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংবাদিকদের অলাভজনক সংস্থা এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়াও। অভিযানের কয়েক ঘন্টা পরই ভারত সরকারকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা ও কঠোর ফৌজদারি আইনকে ‘ভয়ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসাবে’ ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।