প্রদীপ রায় জিতু, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাওয়া বিবি (৩৫) নামে এক গৃহবধূর ভুল সিজারের কারণে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত গৃহবধূ বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের সেনগ্রামের জাহেরুল ইসলামের স্ত্রীর পরিবারের লোকজন সকালে উপজেলা রোড়ের পাশে মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘেরাও করে এলাকাবাসী।
পুলিশ ৯৯৯ খবর পেলে ঘটনা স্থানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবার সূত্রে জানায়, গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা উঠলে রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করানো হয়। দালালের মাধ্যমে রুগী রিলিজ না নিয়েই বৃহস্পতিবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬ টার দিকে বীরগঞ্জ মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়। বেলা ১১ টা দিকে ক্লিনিক মালিক পল্লী চিকিৎসক সাদেকুল ইসলাম ও ডা. সুমন সিজার করে।
গৃহবধূর ভুল সিজারে রক্তপাত বন্ধ না হওয়াতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে, দুপুর ২টার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জরুরি তাকে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সদর হাসপাতালে নিয়ে রক্তপাত বন্ধ না হওয়ায় শনিবার রাত ৩ টার দিকে মারা যায়। নিহত- হাওয়া বিবির মেয়ে সহ স্বজনদের অভিযোগ, গরিব হওয়াতে সদরে নিয়ে যাওয়ার টাকা নেই। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের নিজের টাকায় তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে ও সদর হাসপাতালে অপারেশন করার জন্য টাকা দিয়ে দেয় । অদক্ষ নার্স ও পল্লী চিকিৎসক এবং হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে ভুল সিজারের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই চিকিৎসকেরা পলাতক রয়েছেন।
পরে তারা লাশ নিয়ে, মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রধান ফটকের সামনে উত্তেজিত স্বজনরা ক্লিনিকটি ঘেরাও করে।
এই বিষয়ে নিহত, হাওয়া বিবির স্বামী জাহেরুল ইসলাম জানান, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকা-ের বিচার চাই।
মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় ডা. সুমন ও মডার্ণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সাদেকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে, ক্লিনিক মালিক বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উক্ত স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন ও সোহেল রানার মাধ্যমে স্বজনদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করে দিয়ে তড়িঘড়ি লাশ দাফন সম্পূর্ণ করে ।
সরকারী অনুমোদন ও কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বে-সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো থাকছে না চিকিৎসক, নার্স ও অভিজ্ঞ সেবিকা এবং টেকনোলজিস্ট।
এতে প্রতারিত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহসিন আলী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতিকে ভর্তি করা হয়। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আমরা নরমাল ডেলিভারি হবে মর্মে অবজারভেশনে রাখলেও নিজেই কোন না কোনভাবে রিলিজ না নিয়ে রোগী চলে যায়।
তিনি আরও জানান, রোগীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমি ও আমার সহকর্মী ডাক্তার সহ বীরগঞ্জের মর্ডান ক্লিনিক পরিদর্শনে যাই। পরিদর্শন কালে ক্লিনিক কতৃপক্ষ কোন বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারে নাই। সেই সাথে ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আসি।