Homeরাজনীতিআওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব, বিএনপিতে ঐক্য, শক্তিহীন জাপা

আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব, বিএনপিতে ঐক্য, শক্তিহীন জাপা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল একেবারেই অগোছালো। অধিকাংশ সাংগঠনিক ইউনিটে নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যেখানে কমিটি রয়েছে সেখানেও অসন্তুষ্টি। দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব প্রকট হলেও মামলায় জর্জরিত বিএনপিতে দ্বন্দ্ব নেই বললেই চলে। অপরদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এ জেলায় তেমন কোনো শক্তিমত্তা না থাকলেও কেন্দ্রের ন্যায় দুভাবে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। এ দলেরও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে ব্যতিক্রম জামায়াতে ইসলাম। দলটির নিবন্ধন না থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সুসংগঠিত তারা। জোটের শরিক হতে না পারলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত তারা।

দ্বিধাবিভক্ত, অগোছালো আওয়ামী লীগ

নির্বাচনী পরিসংখ্যানমতে, যশোরের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। তবে বর্তমানে এ জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত। এ বিরোধ পৌঁছেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত। এতদিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ গ্রুপ প্রকাশ্যে থাকলেও নতুন করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের একটি গ্রুপও তৈরি হয়েছে। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহীন চাকলাদার ও কাজী নাবিল আহমেদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। সর্বশেষ শহিদুল ইসলাম মিলনের যে গ্রুপটি তৈরি হয়েছে, তা আসন্ন নির্বাচন ঘিরে। শাহীন চাকলাদার ও কাজী নাবিলের পাশাপাশি এবার তিনিও এমপি পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি যশোর-৩, যশোর-৪ অথবা যশোর-৫-এর যে কোনো একটিতে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। এর বাইরে যশোর (সদর)-৩ আসনে আরও দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।

এদিকে সাংগঠনিকভাবেও অনেকটা অগোছালো আওয়ামী লীগ। জেলার ৮টি পৌর ও থানা কমিটির অধিকাংশতেই কমিটি নিয়ে দুটি পক্ষ বিরাজমান। বিবাদের কারণে এখনও কমিটি দেয়া হয়নি বাঘারপাড়া উপজেলায়। এমনকি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সেখানেও বিরোধ বিরাজমান। সর্বত্র বিরোধ এমন পর্যায়ে যে জেলার ৬টি আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। যশোর (শার্শা)-১ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন। চতুর্থবারের মতো এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। শেখ আফিল উদ্দিন তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করলেও দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকায় দলের মধ্যে বিভক্তিও তৈরি হয়েছে। তার স্থলে বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন গতবারও দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান ও জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিব-উদ-দ্দৌলা সরদার কনক দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। যশোর (ঝিকরগাছা-চৌগাছা)-২  আসনে ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের। বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন এবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন।

যশোর (বাঘারপাড়া-অভয়নগর)-৪  আসনে বিরোধ চরমে। এ আসনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়। দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গেই তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। চতুর্থবারের মতো নৌকার টিকিট পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ, এরই মধ্যে দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের আরও ৮ নেতা মাঠে নেমেছেন মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায়। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গ্রুপের। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদা আলাদাভাবে পালন করে জনসমর্থনের প্রমাণ দিচ্ছেন তারা।

যশোর (মনিরামপুর)-৫ আসনে বিরোধ একেবারে তুঙ্গে। এ বিরোধ আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বেশ ভোগাতে পারে। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। তিনি আবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধ অনেক দিনের। নেতাদের অভিযোগ, স্বপন ভট্টাচার্য্য দলের থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বেশি মূল্যায়ন করেন। যে কারণে এ আসনে প্রার্থী বদল চায় তৃণমূল। এ অবস্থায় স্বপন ভট্টাচার্য্যের স্থলে মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন ১০ নেতা।

যশোর (কেশবপুর)-৬ আসনে বিরোধ তুলনামূলক কম। তবে এ আসনের নেতাকর্মীরা তাদের এলাকার নেতাকে প্রার্থী হিসেবে চান। এখানে আওয়ামী লীগের যেমন বিপুল ভোট রয়েছে। তেমনি বিএনপি-জামায়াতের ভোটসংখ্যাও কম নয়। ফলে নির্বাচনে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে আওয়ামী লীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমীর হোসেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। ২০২০ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। এরপর উপনির্বাচনে দল নৌকা প্রতীক তুলে দেয় দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের হাতে। জয়লাভের পর তিনি এই এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখে চলেছেন। পাশাপাশি তিনি যশোর (সদর)-৩ আসনেরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। যদি তিনি যশোর-৩ আসনে মনোনয়ন পান, তাহলে এ আসনে (যশোর-৬) আওয়ামী লীগের একক মনোনয়নপ্রত্যাশী এইচ এম আমীর হোসেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন,

আমাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। কোনো বিভক্তি নেই। আমাদের একটাই গ্রুপ। আমরা শেখ হাসিনার গ্রুপ। বড় দলে সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো মনোমালিন্য কাজ করে না। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, সবাই তার জন্য কাজ করবে। বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না-আসুক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ভোটার সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভোটারদের নানা অসন্তোষের কথা বলা হয়। আমরা মনে করি ভোটাররা আমাদের পক্ষে আছে। আমরা করোনা মোকাবিলা করে উঠে এসেছি। এখন দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে যে সমসা, তা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। যুদ্ধ থেমে গেলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তা ছাড়া মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা তো বেড়েছে। এখন কেউ দিনে ৮০০ টাকার নিচে রোজগার করে না। ফলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষেই রায় দেবে জনগণ।’

মামলাজর্জরিত বিএনপি সংগঠিত

এদিকে এ জেলায় বিএনপির ঘরও অগোছালো। ওয়ার্ড ও পৌর কমিটি গঠন হলেও ৮ উপজেলা এবং জেলায় কোথাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। জেলা কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে আড়াই বছর আগে ২০২১ সালের এপ্রিলে। উপজেলা কমিটির সম্মেলন শেষ করতে না পারায় জেলা কমিটি ঝুলে আছে। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গ্রুপিং নেই এ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় আছেন অনেকেই। আন্দোলনে থাকলেও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। দল যাকে মনোনয়ন দেবে–তার হয়ে সবাই মাঠে থাকবেন–এভাবেই তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি।

যশোরের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ফ্যাক্টর হলেও বিএনপিও পিছিয়ে নেই। বিগত ১১টি নির্বাচনের মধ্যে তিনটিতে তারা জয় পায়। এ জেলায় বিএনপির হেভিওয়েট নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির অবস্থান এ জেলায় অনেকটা ভালো। তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ।

দলটির নেতাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না। তবে সব আসনেই তাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছেন। যশোর (শার্শা)-১ আসনে বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিসহ তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। যশোর-২ আসনে রয়েছেন ৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। যশোর-৩ আসনে একক প্রার্থী তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। যশোর-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবসহ ৩ জন। যশোর-৫ আসনে এ তালিকায় রয়েছেন ৪ নেতা এবং যশোর-৬ আসনে রয়েছেন ৩ জন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, বিএনপি নির্বাচনে গেলে যশোর-১, যশোর-৩ ও যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে তুমুল প্রতিযোগিতা হবে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন,

আমরা মামলায় জর্জরিত। আমার নামেই ৫৫টি মামলা রয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে শত শত মামলা। মামলা ও আন্দোলনের কারণে সব ইউনিট গঠন করা সম্ভব হয়নি। তারপরও আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা থাকলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। জনগণের নিরাপত্তা নেই। এ সরকারের লুটপাটের কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ফলে এ সরকারের ওপর জনগণ নাখোশ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ জেলার একটি আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারবে না।

শক্তিহীন বিরোধী দল জাপায়ও দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি যশোরে শক্তিহীন। অগোছালো এ দলটি কোনোমতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তৃণমূলে শক্তিহীন হলেও কেন্দ্রের বিরোধ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলার নেতারা। এ জেলায় জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ গ্রুপে দ্বিধাবিভক্ত নেতাকর্মীরা।

বর্তমানে জেলায় কোনো কমিটি নেই। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি দিয়ে চলছে সাংগঠনিক কাজকর্ম। একই অবস্থা যশোর সদর, ঝিকরগাছা ও অভয়নগর উপজেলায়। বাকি ৫ উপজেলা কেশবপুর, শার্শা, মণিরামপুর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়ায় সম্মেলন শেষ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে দলকে আলোকিত করার মতো নেতার অভাব প্রকট। দ্বিধাবিভক্ত জিএম কাদের গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট শরিফুল ইসলাম চৌধুরী সরু এবং রওশন এরশাদ গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুব আলম বাচ্চু। তবে তার সঙ্গে নেতাকর্মীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ দুই গ্রুপের মধ্যে জিএম কাদের গ্রুপ সক্রিয় বেশি। তাদের মধ্যে যশোর-২, যশোর-৩ ও যশোর-৫ আসনের যে কোনো একটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট শরিফুল ইসলাম চৌধুরী সরু, যশোর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জহুরুল হক জহির ও যশোর-৫ আসনে মণিরামপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এমএ হালিম এবং যশোর-৬ আসনে পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ আসনে, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে যশোর-১ আসন বাদে বাকি ৫টি আসনে এবং ২০০১ সালে যশোর-৪ আসনে জয়লাভ করে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যশোরের কোনো আসনেই শক্তিশালী কোনো অবস্থান নেই দলটির নেতাদের। তারপরও আসন্ন নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

পার্টির সাবেক জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট শরিফুল ইসলাম চৌধুরী সরু বলেন,

আমাদের প্রার্থীরা ৫টি আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত যা হবে সেভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব আমরা। আমাদের প্রস্তুতি আছে। তৃণমূল গোছানোর কাজ চলছে। শিগগিরই সব কমিটি গঠন করা হবে এবং আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত রয়েছে।

চোখের আড়ালে সুসংগঠিত জামায়াত

যশোরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যতিক্রম জামায়াতে ইসলাম। দলটির নিবন্ধন না থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সুসংগঠিত তারা। জোটের শরিক হতে না পারলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

যশোর জেলা ও ৮ উপজেলা ইউনিটেই কমিটি রয়েছে দলটির। প্রতি দু-বছর পর কমিটি গঠন হয়। সব ইউনিটে গণতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কোনো কমিটি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্বও নেই। দলটির কোনো স্তরে কোনো গ্রুপিংও নেই। সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। তারা নীরবে-নিভৃতে নিয়মিত সাংগঠনিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলাম যশোর-১ ও যশোর-২ আসনে জয়ী হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে যশোর-৬ আসনে এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হয়। দলটির শার্শা, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা ও কেশবপুর উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা খুব শক্তিশালী। এ উপজেলাগুলোতে তাদের ভোটারও বেশি। জোটগত রাজনীতিতে তারা এ উপজেলার আসনগুলো থেকে প্রার্থী চান। বর্তমানে নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। আসন্ন নির্বাচনে দলটি কোনো জোটে শরিক হতে পারলে এ উপজেলাগুলোতেই প্রার্থী চাইবেন তারা। জোটবদ্ধ না হলে ৬টি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত শুধু যশোর-৬ আসনে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোক্তার আলীকে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্যে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতে ইসলামী যশোর শাখার এক নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। যশোরের ৬টি আসনেই আমাদের প্রার্থী বাছাই করা আছে। কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে হিসেবে মাঠে থাকব আমরা।’

সর্বশেষ খবর