র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা কংগ্রেসম্যান বব মেনেনডেজ এবার নিজেই ফাঁদে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজ পদত্যাগ করেছেন। বব এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
মিশরীয় সরকারের সহায়তা পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে তিনজনের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করতে হলো মার্কিন কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির এই চেয়ারম্যানকে। শিগগিরই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাকে।
তবে কী র্যাবের বিষয়েও কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ওই দাবি তুলেছিলেন মেনেনডেজ?
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কৌঁসুলিদের অভিযোগ, মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী নাদিনে আর্সলানিয়ান মিশর সরকারের সহায়তা পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে কয়েক হাজার ডলারের ঘুষ নিয়েছিলেন। যদিও এই দম্পতি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মেনেনডেজ নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৫ সালেও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে। ওই সময় ফ্লোরিডার এক চক্ষুচিকিৎসকের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল বব মেনেনডেজের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অবমুক্ত করা ৩৯ পাতার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেনেনডেজের রাজনৈতিক অবস্থান ও ক্ষমতা তাকে এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়াতে উৎসাহিত করেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মেনেনডেজ ও নাদিনে দম্পতি নিউ জার্সির তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নগদ অর্থ, সোনা, দামি গাড়ি ও একটি বাড়ির বন্ধক নিয়েছেন।
কৌঁসুলিদের অভিযোগ, মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী গোপনে প্রভাব খাটিয়ে মিশরীয় সরকারের সহায়তা পাইয়ে দিতে এবং তিন ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা দিতে ঘুষ নিয়েছিলেন। ওই তিন ব্যক্তি হলেন ওয়ায়েল হানা, জোসে উরিবে ও ফ্রেড ডাইবস।
বারবার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠা মেনেনডেজ বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত সমালোচিত আরো নানা কারণে।
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে আরও সাত সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় নেমেছিলেন বব। সে সময়ের ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র কাছে বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
মেনেনডেজ ও তার সহকর্মীরা দাবি করেছিলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত র্যাব চারশ মানুষকে বিচারহীন হত্যার শিকার করেছে। গুম, খুন মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ তুলে র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছিলেন বব মেনেনডেজ।
তবে এসব দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিলেও চিঠিতে অভিযোগের সপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি মেনেনডেজ। পর্যবেক্ষকদের কারো কারো ধারণা, বৈদেশিক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে মেনেনডেজ সে সময়ের মার্কিন সরকারের প্রভাবশালীদের দিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, বব নিজের পদের প্রভাব খাটিয়ে মিশরীয় সরকারকে সহায়তায় দেয়া, কিংবা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠা ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়তো কারো কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন তিনি।
তবে মেনেনডেজ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে আদালতেই। আইনি প্রক্রিয়ায় হয়তো বের হয়ে আসতে পারে থলের ভেতরে থাকা আরও অনেক অন্ধকারের বিড়াল।