বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর হার লাখ থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জলবায়ু বিষয়ক ঊচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ পূর্ববর্তী সতর্কীকরণকে প্রাধান্য দিয়ে এটির ব্যবস্থাপনার জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস মানুষকে জানাতে মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধু-২ নামের আর্থ-অবজারভেটরি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ বড় বিনিয়োগ করে দুর্যোগ পূর্ববর্তী সতর্কীকরণের বিষয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর হার লাখ থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
এদিকে, বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘের গভীর সমুদ্র বিষয়ক চুক্তিতে সই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ‘বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অব এরিয়াস বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন’ (বিবিএনজে) শীর্ষক এ চুক্তি সই করেন তিনি৷
গভীর সমুদ্রে সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘের এ সন্ধিপত্র সইয়ের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও আহরণে বাংলাদেশের যে প্রতিশ্রুতি সেটি আরও দৃঢ় হলো।
এর আগে, একাধিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া (পিপিপিআর) বিষয়ে ৭৮তম ইউএনজিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ভাষণ দেন।
তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে মহামারি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে একটি বৈশ্বিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের সকলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে হাজির হয়েছে। আমরা সারা বিশ্বে অনেককে হারিয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, মানুষের হস্তক্ষেপের জন্য প্রকৃতির নিজস্ব সীমা রয়েছে। আমরা বিশ্ব সংহতির অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতাও পেয়েছি। আমরা স্বীকার করছি যে, সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই নিরাপদ নই।’
গত মঙ্গলবার চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরে স্পেন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এ গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে, তিমুর-লেস্তের রাষ্ট্রপতি ড. হোসে রামোস হোর্তা ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।
জাতিসংঘ সদর দফতরে দ্বিপাক্ষিক সভা কক্ষে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর দৈনন্দিন ব্যস্ততা নিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এতে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশের অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল তৈরির জন্য জাতিসংঘ স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এ বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ারেন অ্যালপার্ট মেডিকেল স্কুলের মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ডিন ডা. মুকেশ কে. জৈন এখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অবস্থানস্থল দি লোটে নিউইয়র্ক হোটেলে বিশেষ সম্মাননা সংক্রান্ত প্রশংসাপত্রটি হস্তান্তর করেন।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাইডেন ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে আগত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট-এ ভোজসভার আয়োজন করেন।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত কর্মসূচি নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সংবর্ধনার কথা সাংবাদিকদের জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।