ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা করেছে কিয়েভ।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এই তিন দেশের নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো বলেছেন,
আমাদের পক্ষে এটি প্রমাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সদস্যরাষ্ট্রগুলো আলাদাভাবে ইউক্রেনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে না। তাই আমরা তাদের (স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি) বিরুদ্ধে ডব্লিউটিও-তে মামলা করেছি।
এরই মধ্যে এই একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউক্রেনের রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সম্প্রতি ইইউর প্রতিবেশী ৫ দেশে ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। যার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি।
এই নিষেধাজ্ঞার দেয়ার কারণ হিসেবে দেশগুলো বলেছে, আমদানি করা সস্তা পণ্য থেকে নিজ দেশের কৃষকদের সুরক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ শস্য রফতানিকারক দেশের মধ্যে একটি ছিল। কিন্তু সংঘাত শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে দেশটির কৃষিপণ্য সরবরাহের সক্ষমতা কমে আসে। ফলে নিজেদের পছন্দসই কৃষ্ণসাগরের রুট ব্যবহার করতে না পেরে সংঘাত শুরুর পর থেকে দেশটির কৃষকরা শস্য রফতানির জন্য নির্ভর করতে থাকে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর।
কিন্তু সেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইউক্রেনের পণ্যের আধিক্যের কারণে দাম কমতে থাকে শস্য ও তৈলবীজের। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশগুলোর স্থানীয় কৃষকরা। ফলে ইউক্রেন থেকে কৃষিপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশগুলোর সরকার।
দেশগুলোর কৃষকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে অভিযোগ করেন ইউক্রেনের শস্যের চালান আসায় তাদের নিজস্ব কৃষিপণ্যের বাজার সংকুচিত হয়েছে। ফলে চলতি বছরের শুরুতে চাপে পড়ে ২৭ সদস্যের ইইউ জোট হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়াতে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য আমদানির ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সম্মত হয়েছিল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়। ওইদিন সেই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ এর নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন।
তবে ইউরোপীয় কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বুদাপেস্ট, ওয়ারশ এবং ব্রাতিস্লাভার সরকার। তারা ইউক্রেনে খাদ্যশস্য আমদানির ওপর নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
ইউক্রেনের মামলা করার প্রতিক্রিয়ায় পোল্যান্ড জানিয়েছে, তারা নির্বিশেষে তাদের নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখবে। দেশটির সরকারের মুখপাত্র পিওর মুলার বলেছেন,
আমরা আমাদের অবস্থানে বজায় রেথেছি। আমরা মনে করি এটি সঠিক পদক্ষেপ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ইইউ ও আন্তর্জাতিক আইন থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার ফলাফল হচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞা। ডব্লিউটিও এর কাছে এই মামলা আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে না।
এদিকে পুরো ব্লকের জন্য বাণিজ্য নীতি তৈরির দায়িত্ব ইইউ সদস্যদের ওপর পৃথকভাবে বর্তায় না বলে বারবার উল্লেখ করেছে ইউরোপীয় কমিশন।
তবে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়া এখনও অন্যান্য দেশের বাজারে ইউক্রেনের শস্য পরিবহনে ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছে।